মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট কি পালিয়েছেন?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:১৩, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি র্যাজুয়েলিনার অবস্থান নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহান্তে দেশটির সেনাবাহিনীর একটি অভিজাত ইউনিট তরুণদের নেতৃত্বাধীন জেন জি আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্টের খোঁজ মিলছে না।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর সোমবার জানিয়েছে, র্যাজুয়েলিনা স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (গ্রিনিচ সময় বিকেল ৪টা) জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণ দেবেন। রাজধানী আন্তানানারিভোতে নতুন করে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
গত শনিবার সেনাবাহিনীর অভিজাত ইউনিট ক্যাপসেট প্রকাশ্যে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানায়। পরদিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন যে দেশটিতে “কূটচেষ্টা” চলছে। একই দিন ক্যাপসেট তাদের নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে—যেখানে সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী উপস্থিত থেকে নতুন প্রধানকে স্বাগত জানান।
এ ঘটনাকে মাদাগাস্কারের রাজনীতিতে বড় মোড় বলা হচ্ছে। কারণ ২০০৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানেও ক্যাপসেট–ই ছিল মুখ্য শক্তি—যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে র্যাজুয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন।
বিরোধী নেতা সিতেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়াইকে রয়টার্সকে জানান, আমরা প্রেসিডেন্টের দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। তারা নিশ্চিত করেছে, র্যাজুয়েলিনা দেশ ত্যাগ করেছেন। সেনাবাহিনীর একটি সূত্রও রয়টার্সকে একই তথ্য দিয়েছে।
এদিকে রাজধানীতে সোমবার সকাল থেকেই শত শত মানুষ ঢোল ও ব্যান্ড বাজিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। অনেক সেনাসদস্যও আন্দোলনে যোগ দেন; সামরিক যানবাহনে ঝুলে তরুণরা জাতীয় পতাকা উড়াতে দেখা যায়।
এই বিক্ষোভের সূচনা ২৫ সেপ্টেম্বর, বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের প্রতিবাদে। পরে তা রূপ নেয় রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিতে। প্রধানত তরুণ–তরুণীদের নেতৃত্বাধীন জেন জি মাদাগাস্কার আন্দোলন করছে। তিাদের দাবি, আমরা অন্য দেশগুলোর মতোই পরিবর্তন চাই।
এ আন্দোলনের প্রেরণা এসেছে কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পেরুর মতো দেশের যুব–অভ্যুত্থান থেকে। যেগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার পতনের দিকে গিয়েছিল। একই ধরণের আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সরকারও।
র্যাজুয়েলিনা প্রশাসন সংলাপের আহ্বান জানালেও জেন জি মাদাগাস্কার তাতে সাড়া দেয়নি।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, আন্দোলন শুরুর পর থেকে অন্তত ২২ জন নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। সরকার এ সংখ্যা অস্বীকার করেছে। শনিবার সংঘর্ষে এক ক্যাপসেট সৈন্য নিহত হন।
এদিকে রোববার ঐতিহাসিক ১৩ মে স্কয়ারে হাজারো মানুষ সমবেত হয়। সাঁজোয়া গাড়িতে চড়ে CAPSAT সৈন্যরা সেখানে উপস্থিত হলে ভিড় উল্লাসে ফেটে পড়ে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানা—যাকে ২০০৯ সালে র্যাজুয়েলিনা ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন—তিনিও ওই জনসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার দীর্ঘ ইতিহাস
স্বাধীনতার পর (১৯৬০ সালে) মাদাগাস্কারে সেনা হস্তক্ষেপ বারবার রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণ হয়েছে।
র্যাজুয়েলিনা ২০০৯–এ অভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করেন এবং ২০১৪ সালে সংবিধান পুনর্বহাল হলে ক্ষমতা ছাড়েন।
২০১৯ সালে নির্বাচনে জয় পেয়ে আবার ক্ষমতায় আসেন এবং ২০২৩–এর ভোটে দ্বিতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করেন।
কিন্তু বিদ্যুৎ–পানির তীব্র সংকট, বেকারত্ব ও দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ জনগণ এখন তাঁর পদত্যাগ চাইছে।
উপসংহার
মাদাগাস্কারের বর্তমান সঙ্কট কেবল রাজনৈতিক নয়—এটি এক প্রজন্মের হতাশা ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। প্রেসিডেন্ট র্যাজুয়েলিনার আজকের ভাষণই নির্ধারণ করবে, দেশটি শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের পথে যাবে, নাকি আবারও সামরিক শাসনের ছায়ায় ঢেকে যাবে।