যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন
গাজায় ইসরায়েলি সেনার গুলিতে নিহত ৯
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:২৪, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৩৪, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও উত্তর গাজা সিটি ও দক্ষিণ খান ইউনুসে ইসরায়েলি সেনার গুলিতে অন্তত ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আল-জাজিরার আরবি সংস্করণকে দেওয়া আল-আহলি আরব হাসপাতালের চিকিৎসক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পাঁচজন নিহত হয়েছে উত্তর গাজার শুজাইয়া এলাকায়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি সেনারা ওই এলাকায় গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালে এলাকাটি এখনো সামরিকভাবে সংবেদনশীল হিসেবে চিহ্নিত।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হুমকি প্রতিরোধে গুলি চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় তাদের অবস্থানের কাছে কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি চলে আসায় তারা গুলি চালায়। সেনাবাহিনীর ভাষ্য, এই ব্যক্তিরা ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রম করছিল, যে সীমার মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি সেনারা পিছু হটেছে।
এর আগে শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস ও ইসরায়েল একমত হয় বন্দি বিনিময়ে। চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাদের ধীরে ধীরে মোতায়েনকৃত অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশিত প্রাথমিক ধাপ অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পরও গাজার প্রায় ৫৮ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে। এই ‘ইয়েলো লাইন’ নামে পরিচিত অঞ্চলকে ঘিরেই এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত নথিতে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসের পুনরুত্থানের আশঙ্কা’ না থাকা পর্যন্ত ইসরায়েল তথাকথিত বাফার জোনে অবস্থান বজায় রাখতে পারবে। ফলে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আল-জাজিরা জানায়, মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি অবস্থানসংলগ্ন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। আর যুদ্ধবিরতির মধ্যে এমন ঘটনা পুনরায় সহিংসতার আশঙ্কা জাগাচ্ছে, বিশেষত এমন সময় যখন হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নিজেদের বিধ্বস্ত ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির পর গাজার অভ্যন্তরে আরেকটি জটিল ইস্যু হয়ে উঠেছে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্ন। ইসরায়েল এই শর্তে অনড় থাকলেও হামাস এখনো সে বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার দেয়নি। গাজায় হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাও বাড়ছে।
রবিবার গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাস নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে আটজন হামাস সদস্যও ছিলেন।
সব মিলিয়ে নতুন করে রক্তপাতের এই ঘটনা গাজার যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।