১০১ বছর বয়সে মারা গেলেন ফিলিপাইনের সামরিক আইনের আর্কিটেক্ট জোয়ান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:২৪, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
জোয়ান পন্স এ্নরিলে
ফিলিপাইনের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখে যাওয়া বিতর্কিত শাসনকৌশলের অন্যতম রূপকার জোয়ান পন্স এ্নরিলে আর নেই। বৃহস্পতিবার ১০১ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবার জানিয়েছে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে নিজ বাসভবনে পরিবারের উপস্থিতিতেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুসংবাদটি তার মেয়ে ক্যাটরিনা পন্স এ্নরিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
১৯৭২ সালে ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়রের শাসনামলে আরোপিত কুখ্যাত সামরিক আইন–যা এক দশকের বেশি সময় ফিলিপাইনের জনজীবনকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল—তার অন্যতম স্থপতি ছিলেন জোয়ান পন্স এ্নরিলে।
মার্কোস সরকারের শীর্ষ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি দেশের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন, যা পরবর্তীকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণমাধ্যমের ওপর দমননীতি ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
এ্নরিলে ছিলেন একজন চৌকস আইনজ্ঞ ও প্রভাবশালী কৌশলী রাজনীতিবিদ। তাঁর পরিকল্পিত আইন ও প্রশাসনিক কাঠামোর ওপরই সামরিক শাসনের বেশিরভাগ অংশ দাঁড়িয়ে ছিল।
দীর্ঘ সময় মার্কোস প্রশাসনের কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকলেও পিপলস পাওয়ার বিপ্লবের সময় নাটকীয়ভাবে অবস্থান বদলান এ্নরিলে।
১৯৮৬ সালে জনতার বিপ্লব যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তিনি মার্কোসকে ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দেন। এই অবস্থান পরিবর্তন ফিলিপাইনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথকে সুগম করে।
পরবর্তীতে তিনি সেনেটর, আইনমন্ত্রী এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বয়স শতবর্ষে পৌঁছালেও তিনি রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রদর্শনভিত্তিক বিভিন্ন আলোচনায় সক্রিয় ছিলেন।
এ্নরিলের মৃত্যু ফিলিপাইনের ইতিহাসে এক যুগের সমাপ্তি—যেখানে ক্ষমতার কড়া ব্যবহার, সামরিক শাসন, গণআন্দোলন এবং রাজনৈতিক পুনর্গঠনের এক দীর্ঘ পথযাত্রা জড়িয়ে আছে। তাঁর জীবন একই সঙ্গে প্রশংসা ও বিতর্কের মিশেলে গড়া; ফলে তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে আজও নানা মত রয়েছে।
ফিলিপাইন সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক জাতীয় শোক ঘোষণা না এলেও তাঁর মরদেহ সর্বজনীন শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে পরিবার।
