রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

| ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

শ্রদ্ধাঞ্জলি

চিত্রার তীরে অমর চিত্রকর

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯:২৪, ১০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১১:০১, ১০ অক্টোবর ২০২৫

চিত্রার তীরে অমর চিত্রকর

বাংলার প্রকৃতি, কৃষক, মাঠ ও গরুর হালের দৃশ্য তাকে মুগ্ধ করত শৈশব থেকেই। সেই মুগ্ধতা পরিণত হয়েছিল শিল্পদর্শনে, যেখানে মাটির গন্ধ, মানুষের শ্রম ও প্রকৃতির প্রাণশক্তি মিশে গিয়েছিল তুলির রেখায়। তিনি শিল্পী এস এম সুলতান, বাংলার এক বিস্ময়, যিনি ক্যানভাসে এঁকেছেন এই দেশ, দেশের মানুষ। পৃথিবী বিখ্যাত এই চিত্রকর মাটি ও মানুষের টানে পুুরো জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন চিত্রা নদীর তীরে। আজ তার প্রয়াণ দিবস। তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। 

১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলাতেই মাতৃহারা হন। রাজমিস্ত্রি পিতার কাজের ভেতর দিয়েই তার চোখে ধরা পড়ে নির্মাণের জগৎ, গড়ার আনন্দ। শিল্পে তার আগ্রহ দেখে স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাকে পাঠিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৩৮ সালে তিনি ভর্তি হন কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে। মাধ্যমিকের সনদ না থাকলেও শিল্পসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। সেখানে তিনি তিন বছর অধ্যয়ন করেন, কিন্তু নিয়মের বাঁধন তাকে টানতে পারেনি। শিক্ষার চেয়ে জীবনকেই তিনি মনে করতেন সবচেয়ে বড় শিক্ষক। তাই বেরিয়ে পড়েছিলেন ভবঘুরে জীবনে মানুষ আর প্রকৃতি দেখার জন্য।

সিমলা, দিল্লি, কাশ্মীর, লাহোর, করাচিসহ অগণিত শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। ১৯৪৬ সালে সিমলায় হয়েছিল তার প্রথম একক প্রদর্শনী। স্বাধীনতার পর লাহোরে গিয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আমেরিকা সফর করেন। লন্ডনে অংশ নেন এক যৌথ প্রদর্শনীতে, যেখানে ছিলেন বিশ্বখ্যাত শিল্পী পাবলো পিকাসো, অঁরি মাতিস, সালভাদর দালির মতো মহারথীরাও। সেই অভিজ্ঞতা তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, কিন্তু তিনি পশ্চিমা খ্যাতির জৌলুসে নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি। ফিরে এসেছিলেন নিজের মাটিতে, নড়াইলে।

চিত্রার পাড়ে গড়ে তুলেছিলেন নিজের জগৎ। গ্রামের শিশুরা ছিল তার আপন। তাদের জন্য করেছিলেন আঁকার ব্যবস্থা, গড়ে তুলেছিলেন শিশুস্বর্গ।

তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্প মানে শুধু রঙের খেলা নয়, এটা মানুষের ভেতরের শক্তি জাগিয়ে তোলার মাধ্যম। তার ছবির কৃষক, নারী, গরু-পাখি সবাই যেন জীবনের প্রতীক, শক্তির প্রতিরূপ। কৃষকের পেশিবহুল শরীর, গরুর দৃঢ় চলন, মাঠে কাজরত নারীর প্রাণবন্ততা, এসবই বোঝায় জীবনের অপরাজেয় গতি। সুলতানের ক্যানভাসে কোথাও দুর্বলতা নেই, আছে শুধুই সৃষ্টিশীলতার দীপ্তি।

১৯৮২ সালে তিনি পান একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার। তবে খ্যাতি বা অর্থ তার কাছে তুচ্ছ ছিল। মাটির মানুষদের সঙ্গে বসে গান শোনা, শিশুদের আঁকা দেখা, নদীর তীরে নিরালায় বসে ভাবনায় হারিয়ে যাওয়া, এই ছিল তার জীবনের সুর।

১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন এই অসাধারণ শিল্পী। আজও নড়াইলের চিত্রার তীরে অমর এই চিত্রকরের অজস্র স্মৃতি ছড়িয়ে আছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

১৯৭১ সালেই মানুষ তাদের কর্মকাণ্ড দেখেছে : তারেক রহমান
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনারের বৈঠক
রোজা–পূজা নিয়ে মন্তব্য : জামায়াত প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা
৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ : পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান
নতুন জোটের ঘোষণা দিল এনসিপি
রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত কবরস্থানে নাশকতা
প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্ট; ৩ কয়লাখনি থেকে কয়লা না তোলা ভুল ছিল
আজ নোয়াখালী মুক্ত দিবস
শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু
বিটিআরসির সামনে মোবাইল ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধ
‘মিনেসোটা প্রোটোকল’ মেনে শুরু জুলাই শহীদদের শনাক্তকরণ
বইয়ের জ্ঞান খেলাপিদের কাছে হার মানল: উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন
এভারকেয়ারে জোবাইদা, চলছে মেডিকেল বোর্ডের সভা
স্কুলিং মডেল বাতিলের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ শিক্ষার্থীদের
বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা
নির্বাচনে ৮৯% সাংবাদিক নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায়: জরিপ
১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেডিকেল কোচিং সেন্টার বন্ধ
জানুয়ারির শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বই পাবে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
বিএনপি ‘প্রতিশ্রুতির রাজনীতিতে’ বিশ্বাসী: রিজভী