মিনিয়েচার শিল্পের উন্মোচনকারী হোসেইন বেহজাদ
এই দিনে যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:১৭, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ইতিহাসের পাতায় ১২ অক্টোবর দিনটি শুধু আবিষ্কার আর জন্মের জন্যই নয়, বরং একাধিক খ্যাতিমান মনীষীর প্রয়াণের দিন হিসেবেও স্মরণীয়। তাদের অবদান মানবসভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে—সম্রাট থেকে কথাশিল্পী, সমাজসেবক থেকে বিজ্ঞানী পর্যন্ত সবার নামই এই দিনে আমাদের মনে করিয়ে দেয় সময়ের গভীরতা ও অবিনশ্বর উত্তরাধিকার।
সম্রাট দ্বিতীয় ম্যাক্সিমিলিয়ান (মৃত্যু ১৫৭৬)
রোমান সাম্রাজ্যের শাসক ম্যাক্সিমিলিয়ান দ্বিতীয় ছিলেন এক দূরদর্শী সম্রাট, যিনি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রশমনে এবং ধর্মীয় সহনশীলতার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক বিভাজনের সময়ে তাঁর নরম মনোভাব তাঁকে এক অনন্য শাসক হিসেবে ইতিহাসে স্থান দিয়েছে।
আনাতোল ফ্রাঁস (মৃত্যু ১৯২৪)
ফ্রান্সের প্রখ্যাত কথাশিল্পী ও সাহিত্যিক আনাতোল ফ্রাঁস ১৯২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। মানবতাবাদ, ব্যঙ্গরস ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর লেখাগুলো আজও অনুপ্রেরণার উৎস। তার Thais, The Crime of Sylvestre Bonnard কিংবা Penguin Island—সবই মানবমনের গভীর অনুসন্ধান।
হোসেইন বেহজাদ (মৃত্যু ১৯৬৮)
ইরানের মিনিয়েচার শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন হোসেইন বেহজাদ। পারস্য ঐতিহ্যের সূক্ষ্ম রেখাচিত্রে আধুনিক নন্দনতত্ত্বের ছোঁয়া এনে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের শিল্পরসিকদের মুগ্ধ করেন। তার হাত ধরেই পারসিক মিনিয়েচার পায় এক স্বতন্ত্র আধুনিক রূপ।
শিশিরকুমার সেন (মৃত্যু ১৯৭৮)
গান্ধীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ সমাজসেবী ও সর্বোদয় সেবক শিশিরকুমার সেন ছিলেন মানবতার অক্লান্ত কর্মী। ১৮৯৬ সালে জন্ম নেওয়া এই মহৎ আত্মা গ্রামীণ পুনর্গঠন, শিক্ষাবিস্তার ও অহিংস আন্দোলনে আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন। শান্তিনিকেতনের আদলে তিনি গড়ে তোলেন একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, যা আজও সমাজসেবার প্রতীক।
ড. গুরুপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (মৃত্যু ১৯৮১)
ভারতের বিশিষ্ট পদার্থবিদ ও রসায়নবিদ ড. চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে আধুনিক গবেষণার অগ্রদূতদের একজন। তাঁর গবেষণা নবীন প্রজন্মের বিজ্ঞানচিন্তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ড. বিজয় কুমার বসু (মৃত্যু ১৯৮৬)
চীনে কোটনিস মিশনের অন্যতম সদস্য এই বাঙালি চিকিৎসক ভারতের আকুপাংচার চিকিৎসার পথিকৃৎ। ১৯১২ সালে জন্ম নেওয়া ড. বসু দেশজ ও প্রাচ্য চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয়ে এক নতুন চিকিৎসাধারার সূচনা করেন। তাঁর নামে এখনো চীন ও ভারতে চিকিৎসাক্ষেত্রে স্মারক অনুষ্ঠান হয়।
উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (মৃত্যু ১৯৯৭)
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভ্রমণকাহিনিকার, পরিব্রাজক ও পর্বতপ্রেমিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিন আজ। ১৯০২ সালের ১২ অক্টোবর জন্ম নেওয়া এই মানুষটি নিজেই মৃত্যুর দিনে পূর্ণ করলেন জীবনচক্রের প্রতীকী পরিক্রমা। হিমালয় অভিযান, চীনের পথে বা বাংলাদেশে ভ্রমণ—প্রতিটি রচনাই সাহস, মানবতা ও প্রকৃতির প্রেমে ভরপুর।
১২ অক্টোবর ইতিহাসে এমন এক দিন, যখন মানবসভ্যতার নানা ক্ষেত্র—রাজনীতি, সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, সমাজসেবা ও ভ্রমণ—একসঙ্গে স্মরণ করায় সময়ের অমোঘ সত্য: মৃত্যু শারীরিক সমাপ্তি হলেও সৃষ্টিশীলতা ও মানবতার আলো কখনো নিভে যায় না।