গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৪৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হলো সব নাগরিকের জন্য তথ্যের সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। তথ্য অধিকার শুধুমাত্র সরকারি নথি বা কাগজপত্র পাওয়ার অধিকার নয়, এটি মানুষের নাগরিক ও সামাজিক অধিকারকে শক্তিশালী করার একটি মাধ্যম।
তথ্য অধিকার মূলত মানুষের অধিকার ও কর্তব্যের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি নাগরিকদের সক্ষম করে নিজেদের জীবন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও সামাজিক নীতিমালা নিয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে। তথ্যের সহজলভ্যতা সরকারের কার্যক্রমে জনগণের নজরদারি নিশ্চিত করে, দুর্নীতি কমায় এবং নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করে। সংস্থাগুলোকে জনগণের জন্য জবাবদিহিতা রাখতে বাধ্য করে এবং সমাজে সমতার মান বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে তথ্যের সর্বজনীন প্রবেশাধিকারকে সমর্থন করে আসছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১৫ সালে তথ্যের অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এর ফলে তথ্য অধিকারকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। এই দিবসের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তথ্য অধিকার সংক্রান্ত আইন, নীতি ও সেবা প্রচারে গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশেও তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সালে প্রণীত হয়। আইনটি জনগণকে সরকারের নথি, প্রকল্প, বাজেট, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের অধিকার প্রদান করে। এ আইন সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বাস্তবতা হলো, অনেক সময় নাগরিকরা তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা বাধার সম্মুখীন হন। সঠিক শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই বাধাগুলো কমানো সম্ভব।
তথ্য অধিকার শুধু নাগরিকের সুবিধার জন্য নয়, এটি দেশের উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণ যদি নীতি, প্রকল্প ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিক তথ্য পায়, তবে তারা আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে। এটি দুর্নীতি প্রতিরোধ, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। তথ্যের স্বচ্ছতা সরকারের উপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে এবং উন্নয়নমূলক নীতি গ্রহণে সহায়ক হয়।
তথ্য অধিকার দিবসের উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এনজিও কর্মশালা, সেমিনার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করে। এসব কার্যক্রমে নাগরিকরা তথ্য অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তি পদ্ধতি, সরকারি নথি যাচাই ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে। ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিক, গবেষক এবং সাধারণ নাগরিকের অংশগ্রহণ এই দিবসকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ করে তোলে।
তথ্য অধিকার শুধুমাত্র আইনি অধিকার নয়, এটি মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি অংশ। সকলের জন্য তথ্যের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হলে সমাজে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সমতার মান বৃদ্ধি পায়। আজকের দিনে আমরা মনে করি, তথ্য হলো শক্তি। জ্ঞান ও তথ্যের সহজলভ্যতা নাগরিকদের সচেতন ও সক্ষম করে তোলে। এটি শুধু সরকারের কাজ নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের দায়িত্বও। তাই ২৮ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার দিবসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত।