মিশরে খুলে গেল বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর
একসঙ্গে প্রদর্শিত তুতানখামেনের সমাধির সব নিদর্শন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৩৮, ১ নভেম্বর ২০২৫
মিশরের গিজা মালভূমিতে অবস্থিত গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হল। যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে ইতিহাস গড়েছে।
প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বিশাল কমপ্লেক্সে প্রাচীন মিশরের সাত হাজার বছরের ইতিহাসের এক লক্ষেরও বেশি প্রত্নবস্তু স্থান পেয়েছে।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার ১৯২২ সালে যে সমাধিটি উন্মোচন করেছিলেন, সেই ফারাও তুতানখামেনের সম্পূর্ণ সমাধির সব ৫,৫০০টিরও বেশি নিদর্শন এবার প্রথমবারের মতো একসঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে তুতানখামেনের বিখ্যাত সোনার মুখোশ, রাজসিংহাসন, যুদ্ধরথ, পোশাক, এমনকি তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রীও।
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের সাবেক প্রধান ও আন্তর্জাতিক ইজিপ্টোলজিস্ট সমিতির সভাপতি ড. তারেক তাওফিক বলেন, “এই প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ছিল হাওয়ার্ড কার্টার যেমনভাবে তুতানখামেনের সমাধি দেখেছিলেন, দর্শকদেরও যেন সেই অভিজ্ঞতা দেওয়া যায়।”
প্রায় ৫ লক্ষ বর্গমিটারজুড়ে গড়া এই মিউজিয়াম কমপ্লেক্স গিজার মহান পিরামিডের পাশেই অবস্থিত। ভবনটির বাহ্যিক অংশে আলাবাস্টার পাথরের ত্রিভুজাকৃতি দেয়ালে খোদাই করা হায়ারোগ্লিফিক লেখা এবং পিরামিড-আকৃতির প্রবেশদ্বার প্রাচীন মিশরের স্থাপত্য ঐতিহ্যের এক অনন্য পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে।
প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
রামেসিস দ্বিতীয়ের ১১ মিটার উচ্চ মূর্তি,
৩,২০০ বছরের পুরনো, ১৬ মিটার লম্বা ঝুলন্ত অবেলিস্ক এবং খুফুর ৪,৫০০ বছরের পুরনো রাজকীয় নৌকা।
মিশরের প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. জাহি হাওয়াস বলেন, “এই জাদুঘর মিশরীয়দের প্রত্নতত্ত্বে সক্ষমতার প্রমাণ। আমরা বিদেশি মিউজিয়ামগুলোতে থাকা রোজেটা স্টোন, দেন্দেরা জোডিয়াক ও নেফারতিতির বক্ষমূর্তিটি ফেরত চাই— এগুলো আমাদের ইতিহাসের অংশ।”
ড. হাওয়াস ইতোমধ্যে এসব নিদর্শন ফেরানোর দাবিতে অনলাইন আবেদন শুরু করেছেন, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ স্বাক্ষর দিয়েছেন।
গাইড ও তরুণ ইজিপ্টোলজিস্ট আহমেদ সেদ্দিক আশা প্রকাশ করেছেন যে, “গ্র্যান্ড মিউজিয়ামের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মিশরীয় পর্যটন এক নতুন স্বর্ণযুগে প্রবেশ করবে। তুতানখামেন এমন এক প্রতীক, যার টানে গোটা বিশ্ব আবার গিজায় ফিরবে।”
প্রত্যাশা করা হচ্ছে, জাদুঘরটি প্রতি বছর প্রায় ৮০ লক্ষ দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করবে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মিউজিয়ামের শীর্ষ তলায় দাঁড়িয়ে দর্শকরা দেখতে পাবেন— বিশাল জানালায় ফ্রেমবন্দি গিজার তিনটি মহান পিরামিডের দৃশ্য। যেন প্রাচীন মিশরের গৌরব ও আধুনিক মিশরের অগ্রগতি একসঙ্গে ধরা দিয়েছে এই স্থাপনায়।
ড. তাওফিকের ভাষায়, “এটি শুধু প্রাচীন ইতিহাসের প্রদর্শনী নয়— এটি আধুনিক মিশরেরও প্রতীক। কারণ, এই মিউজিয়ামটি নির্মাণ করেছে মিশরীয়রাই।”
