রাশিয়ার লাল চুল ‘ব্ল্যাক উইডো’ আনা চ্যাপম্যান আবারও গুপ্ত মিশনে!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:২৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:৫৬, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

রাশিয়ার আনা চ্যাপম্যান। ছবি: সংগৃহীত
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত রুশ গুপ্তচর আনা চ্যাপম্যান আবারও নতুন মিশনে নামছেন—এবার তিনি বলবেন, সেইসব রুশ গোয়েন্দাদের গল্প যারা ধরা পড়েননি! তিনি রাশিয়ার নতুন প্রতিষ্ঠিত ‘রুশ গোয়েন্দা জাদুঘর’-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।
আনা একসময় পশ্চিমা বিশ্বের গোপন তথ্য বের করে আনার জন্য তার সৌন্দর্য ও আকৃষ্ট করার ক্ষমতা ব্যবহার করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
এই জাদুঘরটি সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা ‘এসভিআর’-এর অধীনে পরিচালিত হবে এবং এটি মস্কোর গোর্কি পার্কের কাছে। এটি মূলত রুশ গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস ও ‘অর্জন’ প্রদর্শন করবে। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও এসভিআরের প্রধান সের্গেই নারিশকিনের তত্ত্বাবধানে এই জাদুঘর রুশ গুপ্তচরদের ঐতিহ্য উদযাপন করবে।
আনা চ্যাপম্যানের গল্প যেন বাস্তবের এক থ্রিলার। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ‘অপারেশন ঘোস্ট স্টোরিজ’ নামে এক দশকব্যাপী তদন্তে নিউ ইয়র্কে তাকে গ্রেপ্তার করে। এই অভিযানে রাশিয়ার এক ‘স্লিপার সেল’-এর সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়—যারা দীর্ঘদিন ধরে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছিল।
২০০৯ সালে ম্যানহাটনে আসার পর আনা নিজেকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি তার ল্যাপটপ ব্যবহার করে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন ওয়্যারলেস যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করতেন—এবং অন্তত দশবার এভাবে কাজটি সম্পন্ন করেন।
২০১০ সালের ২৭ জুন তাকে আরও নয়জনের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ দিন পর তারা সবাই রাশিয়ার হয়ে বেআইনিভাবে কাজ করার দায়ে দোষ স্বীকার করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাশিয়ায় ফেরত পাঠায় একটি আলোচিত ‘স্পাই-সোয়াপ’-এর মাধ্যমে, যেখানে চার রুশ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়; যারা পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছিল বলে অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে একজন ছিলেন সের্গেই স্ক্রিপাল, যিনি পরে যুক্তরাজ্যের সলসবেরিতে বিষ প্রয়োগের ঘটনায় আলোচনায় আসেন।
গ্রেপ্তারের আগে চ্যাপম্যান লন্ডনে বাস করতেন। সেখানে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও ধনকুবেরদের উচ্চবিত্ত মহলে মিশে গিয়েছিলেন। তার গল্প শুনে অনেকে তাকে বাস্তবের ‘ব্ল্যাক উইডো’, মার্ভেল কমিকসের চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করেন। সেখানেই এক রুশ গুপ্তচর তার নেটওয়ার্কিং দক্ষতা দেখে তাকে দলে নেন।
তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান বিয়ে করে—তার স্বামী ছিলেন অ্যালেক্স চ্যাপম্যান। কিন্তু সেই বিয়ে দ্রুত ভেঙে যায়। অ্যালেক্স একবার অভিযোগ করেছিলেন, আনা তাকে একটি ‘পাওয়ার ড্রিল’ দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।
নিজের লেখা বইয়ে স্বীকারোক্তি
গত বছর প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ‘বন্দিআন্না: টু রাশিয়া উইথ লাভ’ (BondiAnna: To Russia With Love)-এ তিনি নিজেকে এক বাস্তব ‘নারী ০০৭’ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন, “আমি জানতাম, পুরুষদের ওপর আমার প্রভাব কেমন। প্রকৃতি আমাকে যা দিয়েছে—সরু কোমর, পূর্ণ বক্ষ, আর লালচে ঢেউ খেলানো চুল—শুধু তা ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হতো। সরল কিন্তু আকর্ষণীয় পোশাক, হালকা মেকআপ আর স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাসই যথেষ্ট ছিল। আমি কখনও অতিরিক্ত চেষ্টা করিনি কাউকে খুশি করতে—আর সেটাই আমার ম্যাজিক।”
বইটিতে তিনি বিলাসবহুল জীবন, পার্টি, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং গ্ল্যামার জগতে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। একটি মজার ঘটনায় তিনি উল্লেখ করেন, কীভাবে স্ট্রিপ পোকার খেলায় জিতে লন্ডনের এক হেজ ফান্ডে চাকরি পান।
রাশিয়ায় ফিরে আনা চ্যাপম্যান নতুনভাবে নিজেকে গড়ে তোলেন—প্রথমে ব্যবসায়ী হিসেবে, পরে টেলিভিশন উপস্থাপক ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হয়ে ওঠেন এবং প্রো-পুতিন দেশপ্রেমমূলক প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিতে থাকেন। ধীরে ধীরে তিনি রুশ গোয়েন্দা সংস্থার এক ‘জাতীয় গর্ব’-এ পরিণত হন। পরে তিনি এক সন্তানের মা হন।
এখন ৪৩ বছর বয়সে, আনা রোমানোভা নাম ব্যবহার করে তিনি রাশিয়ার ঐতিহ্য ও ‘প্রথাগত মূল্যবোধ’ প্রচারে ব্যস্ত। দ্য সান পত্রিকার তথ্যমতে, তিনি নতুন মিশনে সেই রুশ গুপ্তচরবৃত্তির অতীতকে জাগিয়ে তুলছেন—যেটি একসময় নিজেই তার জীবনকে থ্রিলারে পরিণত করেছিল।