বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

ট্রাম্প এশিয়া সফরে যাচ্ছেন, চুক্তি করতে চান শি জিনপিংয়ের সঙ্গে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:৫৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৫৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্প এশিয়া সফরে যাচ্ছেন, চুক্তি করতে চান শি জিনপিংয়ের সঙ্গে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহে এশিয়া সফরে যাচ্ছেন—যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠককে ঘিরে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন আলোচনার ঝড় উঠেছে।

বুধবার ট্রাম্প জানান, তিনি মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন—যা তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম এশিয়া সফর। এই সফরকে ঘিরে হোয়াইট হাউস তেমন বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ট্রাম্প নিজেও সতর্ক করে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকটি “হয়তো নাও হতে পারে”—কারণ দুদেশের মধ্যে এখনো নানা টানাপোড়েন চলছে।

এএফপি বরাত দিয়ে পাকিস্তানের জিও নিউজ এ সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবু ট্রাম্পের আশা, তিনি চীনের সঙ্গে একটি “ভালো চুক্তি” করতে পারবেন এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন—যা বিশ্ববাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

হোস্ট দেশগুলোও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে নানা আয়োজন করছে—যাতে তারা নিজেদের পক্ষে অনুকূল বাণিজ্য ও নিরাপত্তা চুক্তি আদায় করতে পারে।

মালয়েশিয়া ও জাপান সফর
প্রথম গন্তব্য মালয়েশিয়া, যেখানে ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প একাধিকবার এই আঞ্চলিক ফোরামের সভা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবার সেখানে তিনি মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্যচুক্তি সই করতে পারেন।

সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হলো থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি—যা ট্রাম্পের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হতে পারে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল দেখতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগ্রহী।”

এছাড়া সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে।
এরপর ট্রাম্প যাবেন জাপানে, যেখানে তিনি দেখা করবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে—জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।

জাপান ট্রাম্পের আরোপিত বৈশ্বিক শুল্কনীতির বড় ক্ষতি এড়াতে পেরেছে। তবে ট্রাম্প এখন টোকিওকে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি বন্ধ করতে এবং প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে চাপ দিচ্ছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় শি জিনপিং বৈঠকের সম্ভাবনা

সফরের মূল আকর্ষণ দক্ষিণ কোরিয়া। ২৯ অক্টোবর ট্রাম্প সিউলে পৌঁছাবেন এপেক (APEC) সম্মেলনে যোগ দিতে—যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে।

দুই নেতার এ সাক্ষাৎ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম, যা মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে। তবে চীনের বিরল ধাতু (rare earth) রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ, যা আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে।

ট্রাম্প প্রথমে বৈঠক বাতিলের হুমকি দেন ও নতুন শুল্ক আরোপ করেন, পরে মত বদলে জানান, বৈঠক “হতে পারে বা নাও হতে পারে।”

বুধবার তিনি বলেন, “আমি আশা করছি শির সঙ্গে সবকিছুর বিষয়ে ভালো একটি চুক্তি করতে পারব।” একইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, শি জিনপিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে প্রভাবিত করবেন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, কোনো বড় অগ্রগতি আশা করা ঠিক হবে না।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো রায়ান হাস বলেন, “এই বৈঠক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় নয়, বরং চলমান ধারারই একটি পরবর্তী ধাপ হবে।”
দক্ষিণ কোরিয়া ট্রাম্পের সম্মানে দেশটির সর্বোচ্চ সম্মাননা “গ্র্যান্ড অর্ডার অব মুগুংহোয়া” প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

সফরের ঠিক আগে বুধবার উত্তর কোরিয়া একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প আবারও কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন—যদিও হোয়াইট হাউস এখনো এমন কোনো বৈঠকের প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন