বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

পাকিস্তান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, অপরিহার্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

প্রকাশ: ১৩:৫৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

পাকিস্তান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, অপরিহার্য

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদ শেখ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদ শেখ বলেছেন, ইসলামাবাদ কূটনীতি, স্থিতিশীলতা এবং বাস্তবভিত্তিক অর্থনৈতিক নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনো পছন্দের বিষয় নয়, বরং উভয়ের জন্যই অপরিহার্য।

রাষ্ট্রদূত শেখ বলেন,“আজকের এবং আগামীর দুই বড় দেশের মধ্যে — বর্তমান ও ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ থেকে — সুসম্পর্ক কোনো বিকল্প নয়, এটি একান্তই অপরিহার্য।”

তিনি ওয়াশিংটনে আয়োজিত ফিউচার সিকিউরিটি ফোরাম ২০২৫-এর “যুক্তরাষ্ট্র–পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ” শীর্ষক এক আলোচনায় এ মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রদূত শেখ বলেন, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো এবং তা নানা বৈশ্বিক ইস্যু—বিশেষত সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা—নিয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে।

ফোরাম আয়োজন করে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি ও নিউ আমেরিকা, সহযোগিতায় ছিল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স প্লাস । এতে নীতি-নির্ধারক, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অংশ নেন।

রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান শেখ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,“৮৮ ঘণ্টার অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছেন, সেটি ১.৭ বিলিয়ন মানুষের পারমাণবিক অঞ্চলে বিপর্যয় ঠেকানোর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

রাষ্ট্রদূত শেখ জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে পাকিস্তানের কূটনীতির মূলভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন,“জলবায়ু পরিবর্তন পাকিস্তানের জন্য কোনো বিমূর্ত বিষয় নয়; এটি এক অস্তিত্ব সংকট।”

বারবার বন্যা, অপ্রত্যাশিত ক্লাউডবার্স্ট এবং ধারাবাহিক জলবায়ু দুর্যোগ কীভাবে দেশের উন্নয়ন অবকাঠামো ধ্বংস করছে, ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে এবং পুনর্গঠন প্রচেষ্টা ভেঙে দিচ্ছে, সে কথাও তিনি তুলে ধরেন।

তিনি আরও যোগ করেন,“আমরা যা কয়েক বছরে গড়ি, তা আবার বন্যায় ধুয়ে যায়—কিন্তু পুনর্নির্মাণের জন্য নেওয়া ঋণ আমাদের ফেরত দিতেই হয়।”

রাষ্ট্রদূত শেখ বলেন, ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে) জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এখন জরুরি।

তিনি বলেন,“দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি কেবল কাশ্মীর ইস্যুর ন্যায়সঙ্গত সমাধানের মাধ্যমেই সম্ভব।”

জোট ভিত্তিক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ভারসাম্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে।“চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গতকাল শুরু হয়নি, আর আগামীকাল শেষও হবে না,”

রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, যে চীন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর  একটি আঞ্চলিক সংযোগ ও সমৃদ্ধির প্রকল্প, কোনো ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান এক সময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিল—এবং আজও বিশ্ব শান্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সেতুবন্ধন হিসেবে একই ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।

রাষ্ট্রদূত শেখ আফগানিস্তান থেকে আসা সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ নিন্দা করে বলেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের ভুক্তভোগী এবং এ সমস্যার সমাধানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন,“আমাদের পছন্দ কূটনীতি। পাকিস্তানের ইতিহাসই দেখায়, আমরা সর্বদা সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে।”

আফগান শরণার্থী বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করেন, শুধুমাত্র অবৈধ ও নথিবিহীন বাসিন্দাদেরই স্বদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে এবং পাকিস্তান তাদের মর্যাদার সঙ্গে ফেরার ব্যবস্থা করছে।

তিনি আরও বলেন, পাক-আফগান সীমান্তে চলাচল আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ভিসা-ভিত্তিক হওয়া উচিত।

রাষ্ট্রদূত শেখ ইউক্রেন সংঘাত সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান এবং এই প্রচেষ্টার সফলতা কামনা করেন।

ফোরামের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদ শেখ প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন,“বিশ্ব শান্তি, সংলাপ এবং পারস্পরিক সম্মানই পাকিস্তানের কূটনীতির মূল প্রতিশ্রুতি।”

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন