সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের ওপর নিয়োগ বা পারমিট ফি চাপানো নিষিদ্ধ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

সৌদি আরবগামী গৃহকর্মী। ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবে এখন থেকে কোনো নিয়োগকর্তা গৃহকর্মীর কাছ থেকে নিয়োগ, ওয়ার্ক পারমিট, সার্ভিস ট্রান্সফার বা পেশা পরিবর্তনের জন্য কোনো প্রকার ফি আদায় করতে পারবেন না।
এই নিয়ম ভঙ্গ করলে নিয়োগকর্তাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা এবং তিন বছরের জন্য গৃহকর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।
বারবার একই অপরাধ করলে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এবং দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে।
নতুন নির্দেশিকার উদ্দেশ্য
সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গৃহকর্মীদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কিত নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই নতুন নিয়মের লক্ষ্য হলো দেশব্যাপী গৃহকর্মীদের ন্যায়সঙ্গত আচরণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
গৃহকর্মীদের অধিকার বিষয়ে নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে,
নিয়োগকর্তা কোনো ধরনের নিয়োগ, স্থানান্তর বা পারমিট ফি আদায় করতে পারবেন না।
চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো বেতন প্রদান করতে হবে।
সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম, প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা বিশ্রাম, এবং দুই বছর চাকরির পর এক মাসের বেতনসহ ছুটি দিতে হবে।
প্রতি দুই বছর পর বিনামূল্যে দেশে যাওয়ার বিমান টিকিট, চার বছর চাকরির পর এক মাসের সমপরিমাণ সার্ভিস বোনাস এবং চিকিৎসা সনদসহ বছরে ৩০ দিনের অসুস্থতার ছুটি প্রাপ্য হবে।
গৃহকর্মীর মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষার অংশ হিসেবে নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—নিয়োগকর্তা কোনো অবস্থায়ই কর্মীর পাসপোর্ট বা ইকামা (রেসিডেন্স পারমিট) নিজের কাছে রাখতে পারবেন না।
স্বীকৃত গৃহকর্ম পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে—গৃহপরিচারিকা, ব্যক্তিগত চালক, হোম নার্স, রাঁধুনি, দর্জি, বাটলার, সুপারভাইজার, হাউস ম্যানেজার, নিরাপত্তারক্ষী, ব্যক্তিগত সহকারী, কৃষক, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং গৃহে কফি প্রস্তুতকারক ইত্যাদি।প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে এই তালিকা আরও সম্প্রসারিত হতে পারে।
নিয়োগকর্তার দায়িত্ব নির্দেশিকা অনুযায়ী নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত লিখিত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে এবংউপযুক্ত বাসস্থান ও খাবার (অথবা তার সমপরিমাণ ভাতা),চিকিৎসা সেবা ও আইনি কাগজপত্রের ব্যয় নিজে বহন,কর্মীর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের সুযোগ এবং নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে গৃহকর্মীর দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে—নিয়োগকর্তা ও তার পরিবারের প্রতি শালীন আচরণ বজায় রাখা,পরিবারের সম্পত্তি রক্ষা ও গোপনীয়তা বজায় রাখা,শারীরিক বা মৌখিক সহিংসতা থেকে বিরত থাকা, কোনো বৈধ কারণ ছাড়া কাজ ছেড়ে না যাওয়া এবং সৌদি আরবের আইন, ধর্ম, সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ সম্মান করা।
সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নির্দেশিকা দেশের ন্যায়, সমতা ও মানব মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এমন নীতি তৈরি করতে কাজ করছে যা নিয়োগকর্তা ও গৃহকর্মী উভয়ের অধিকার রক্ষা করবে এবং স্থিতিশীল ও নৈতিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবে।