বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

জাপানে ‘আয়রন লেডি’ সানায়ে তাকাইচির উত্থান

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪:৪২, ৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:২১, ৬ অক্টোবর ২০২৫

জাপানে ‘আয়রন লেডি’ সানায়ে তাকাইচির উত্থান

৬৪ বছর বয়সী সানায়ে তাকাইচি জাপানের লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন—প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পথে। তবে তার রক্ষণশীল ভাবধারাই এখন নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সানায়ে তাকাইচি শনিবারের রানঅফ ভোটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির ছেলে শিনজিরো কোইজুমিকে পরাজিত করে জাপানের শাসক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নতুন প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ১৫ অক্টোবর সংসদীয় ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন তিনি।

জাপানের রাজনীতিতে নারীর উপস্থিতি বরাবরই সীমিত—নিম্নকক্ষে মাত্র ১৫ শতাংশ সদস্য নারী এবং প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে আছেন মাত্র দুজন। তাই অনেকে এই বিজয়ে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখলেও বিশ্লেষকরা তেমন আশাবাদী নন।

নারীর অধিকার প্রশ্নে বিতর্কিত অবস্থান
টোকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউকি তসুজি বলেন, তাকাইচি “নারীর অধিকার বা লিঙ্গসমতা নীতিতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। তাকাইচি বরাবরই এলডিপির ঐতিহ্যগত অবস্থান—নারী মানে মা ও স্ত্রী—এই ধারণার পক্ষপাতী। তিনি সমলিঙ্গ বিবাহ, নারী উত্তরাধিকারীকে রাজতন্ত্রে অনুমোদন, কিংবা স্বামী-স্ত্রীর পৃথক পদবি ব্যবহারের আইন—সব কিছুর বিরোধিতা করেছেন। তবে তাকাইচি নিজেই মেনোপজজনিত শারীরিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে এনেছেন। তিনি বলেছেন, পুরুষদের নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা জরুরি, যাতে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষায় নারীরা উপযুক্ত সহায়তা পায়।

১৯৯৩ সালে নিজের জন্মস্থান নারা থেকে প্রথম নির্বাচিত হন তাকাইচি। এরপর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও লিঙ্গ সমতা বিষয়ক মন্ত্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ এবং তার রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী। তাকাইচি নিজেকে প্রায়ই ব্রিটিশ ‘আয়রন লেডি’ মার্গারেট থ্যাচারের অনুসারী হিসেবে উল্লেখ করেন।

ড্রামস ও বাইকের দুনিয়া থেকে রাজনীতিতে

তরুণ বয়সে তিনি ছিলেন হেভি-মেটাল ব্যান্ডের ড্রামার এবং মোটরবাইকের উৎসাহী চালক। এখন তিনি বাড়তি প্রতিরক্ষা ব্যয়, পারমাণবিক সংযোজন (ফিউশন) গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালীকরণ, প্রবৃদ্ধির জন্য আর্থিক প্রণোদনা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের পক্ষে নীতিমালা প্রচার করেন।

কঠোর পররাষ্ট্রনীতি ও ঐতিহাসিক পুনর্মূল্যায়ন
তাকাইচিকে বিদেশনীতি বিষয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত করা হয়। তিনি জাপানের যুদ্ধকালীন ইতিহাসে সংশোধনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন এবং নিয়মিত ইয়াসুকুনি মন্দির পরিদর্শন করেন—যা প্রতিবেশী দেশগুলোকে ক্ষুব্ধ করে।

তার চীনবিরোধী ও দক্ষিণ কোরিয়া-সতর্ক মনোভাব এলডিপির জোটসঙ্গী কোমেইতো দলের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করতে পারে। তবে তিনি প্রয়োজনে অতি-ডানপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সানায়ে তাকাইচির উত্থান নিঃসন্দেহে জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলক। কিন্তু তিনি দেশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, নাকি পুরুষপ্রধান রাজনীতিতে রক্ষণশীল ধারাকে আরও শক্তিশালী করবেন—এই প্রশ্ন এখন জাপানি সমাজে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
বুধবার থেকে শুরু অনলাইন জামিননামা প্রক্রিয়া
শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু