বিবিএস জরিপে তথ্য
প্রতি ৪ নারীর ৩ জনই স্বামীর সহিংসতার শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:০৪, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনই জীবনে অন্তত একবার স্বামীর সহিংসতার শিকার হয়েছেন— এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে পরিচালিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ৭৬ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে স্বামীর দ্বারা শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত এক বছরেই এ ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন ৪৯ শতাংশ নারী।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো— সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ কখনও তা প্রকাশ করেননি।
জরিপে জাতিসংঘের নির্ধারিত সহিংসতার ধরন ছাড়াও বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক আচরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দেখা গেছে—
- ১৫ বছর বয়সের পর ১৫ শতাংশ নারী নন-পার্টনার দ্বারা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
- ২.২ শতাংশ নারী নন-পার্টনার কর্তৃক যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
- ৮.৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত সহিংসতার (যেমন যৌন ব্ল্যাকমেইল, ছবি অপব্যবহার, ডিজিটাল নজরদারি) শিকার হয়েছেন।
- সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ১৪.৫ শতাংশ চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
- স্বামীর সহিংসতার শিকার নারীদের মাত্র ৭.৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, বেশিরভাগই স্থানীয় নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
অন্যদিকে, নন-পার্টনার সহিংসতার ক্ষেত্রে মাত্র ৩.৮ শতাংশ নারী আইনি সহায়তা নিয়েছেন।
অধিকাংশ নারী জানিয়েছেন, সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে তারা নীরব থেকেছেন।
গর্ভাবস্থায়ও সহিংসতা
গর্ভাবস্থায়ও সহিংসতা থেমে থাকেনি। জরিপে দেখা গেছে—
৭.২ শতাংশ নারী শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন,
৫.৩ শতাংশ নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মা ও নবজাতকের জন্য বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
সহিংসতার কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী
বিবিএসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে—যৌতুক,স্বামীর মাদকাসক্তি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক,
শহুরে বস্তিতে বসবাস—
এসব কারণ নারীদের সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা থাকলে সহিংসতার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
নীতি প্রণয়নে দিকনির্দেশনা
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন,“এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের জরিপ। এই তথ্য ভবিষ্যৎ নীতি প্রণয়নে নির্ভরযোগ্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।”
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, “হাজারো নারী সাহস করে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। এখন প্রয়োজন রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ— যাতে সহিংসতা প্রতিরোধ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে নারী ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার, উইমেন’স অ্যাফেয়ার্স রিফর্ম কমিশনের চেয়ারপার্সন শিরীন হক এবং এসপিবিএনের ডিআইজি ড. শোবে রিয়াজ আলম বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে প্রমাণভিত্তিক নীতি প্রণয়ন এবং নারী ও কন্যাশিশুর জন্য সুরক্ষিত সমাজ গড়ার বিকল্প নেই।”