এক শতাব্দী ধরে পড়ে থাকা তুরস্কের ’ভূতের শহর’
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৫৯, ২১ অক্টোবর ২০২৫

তুরস্কের মুগলা প্রদেশের শহর কায়াকোয়। ছোট ছোট সড়ক, সারিবদ্ধ ঘরবাড়ি খাড়া উঠে গেছে উপত্যকার দিকে। শহরের মাঝখানে প্রাচীন ঝরনা, আছে বেশ কয়েকটি গির্জাও। এক সময় সেখানে ছিল মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নীল এজিয়ান সাগরের জলরাশি শহরের উঁচু স্থান থেকে চোখে ভাসে। শত বছর ধরে জনমানবহীন এই শহর।
নিস্তব্ধ নীরবতার কায়াকোয় সত্যিই যেন এক "ভূতের শহর"। অতীতের বাসিন্দারা এটাকে পরিত্যক্ত শহর হিসেবে ফেলে গেছেন। এখন শহরটি সময়ের গভীরে হিমায়িত এক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঠায় দাড়িয়ে আছে। মূলত শহরটি তুরস্কের অন্ধকার সময়ের এক বাস্তব স্মারকনামা।
লেভিসি নামে পরিচিত কায়াকোয় শহরটির পাহাড়ের ঢালে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘর-দুয়ার ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজের গহীনে। বর্তমানে শহরটি ঘুরে দেখার জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সুন্দর জায়গা। গ্রীষ্মে পরিষ্কার আকাশ ও প্রখর রোদ আর শীতে আবৃত থাকে পাহাড় বা সমুদ্র থেকে আসা কুয়াশার ভেলায়।
এক শতাব্দী আগে ১০ হাজার গ্রিক অর্থোডক্স খ্রিষ্টান কারিগরদের ব্যস্ত শহর ছিল কায়াকোয়। তারা এই অঞ্চলের মুসলিম তুর্কি কৃষকদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করতো। কিন্তু তুরস্কের স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের উত্থান ঘিরে যে অস্থিরতা তৈরি হয়, তাতে ভেঙে পড়ে তাদের দৈনন্দিন জীবন।
১৯২২ সালে গ্রিক-তুর্কি যুদ্ধ শেষে প্রতিবেশী উভয় দেশই একে অপরের সম্পর্কযুক্ত লোকদের তাড়িয়ে দেয়। সেই সময় কায়াকোয় বাসিন্দারা চলে যান গ্রিসে, আর গ্রিসের কাভালায় বসবাসকারী তুর্কিরা আসেন তুরস্কে। কিন্তু নতুন আসা তুর্কিরা এ শহরে থাকতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে কায়াকোয় অবহেলা, অনাদরে হয়ে পড়ে মানবশূন্য।
অল্পসংখ্যক মানুষ এখন জীবিত আছে শহরটিতে। তাদের মধ্যে আয়সুন একিজের দাদা-দাদি, যার পরিবার কায়াকোয়র প্রধান প্রবেশপথের কাছে একটি ছোট রেস্তোরাঁ চালায়। রেস্তোরাঁটি শহর ঘুরতে আসা পর্যটকদের জলখাবার পরিবেশন করে। একিজ জানান, "গ্রিক লোকেরা কাঁদছিল। কারণ, তারা শহর ছেড়ে যেতে চাইত না। কেউ কেউ তাদের বাচ্চাদের তুর্কি বন্ধুদের কাছে রেখে গিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, তারা ফিরে আসবেন। কিন্তু তারা কখনও ফেরেননি।"
একিজ আরো জানান যে, তাঁর দাদা-দাদির পরিবার রাখাল ছিল। সহজেই শহরের প্রান্তে জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেন। তাদের বেশির ভাগ সহকর্মী কায়াকোয়েতে থাকতে পছন্দ করতেন না। কারণ, বাড়ির দেয়াল নীল রং করা হয়েছিল বিচ্ছু বা সাপ তাড়ানোর জন্য।
কায়াকোয়ে তৈরি প্রায় দুই হাজার পাঁচশতটি বাড়ির অবশিষ্ট দেয়ালে এখনও নীল রং দেখা যায়। আধুনিক যুগের দ্বারপ্রান্তে শহরটি যেন এক প্রাচীন জীবনধারার স্ন্যাপশট হিসেবে পৃথিবীর বুকে রয়ে গেছে।
সূত্র: সিএনএন।