আইএলও’র তিনটি মৌলিক কনভেনশনে সই করল বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৫৬, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশনে সই করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ছবি : পিআইডি
বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত হলো। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশনে সই করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই পদক্ষেপকে ‘বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন কনভেনশনগুলোর অনুসমর্থনপত্রে স্বাক্ষর করেন।
এ তিনটি কনভেনশনে সইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আইএলও’র ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুসমর্থনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হলো।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক-বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান, শ্রম সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া এবং আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনোন।
কোন কোন কনভেনশনে সই
১️. কনভেনশন নং ১৫৫ (১৯৮১)—পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক
২️. কনভেনশন নং ১৮৭ (২০০৬)—কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নয়নে প্রচারণামূলক কাঠামো
৩️. কনভেনশন নং ১৯০ (২০১৯)— কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ
আইএলও ২০২২ সালে ১৫৫ ও ১৮৭ নম্বর কনভেনশনকে ‘মৌলিক কনভেনশন’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর তৎকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি। আমরা বলেছি, ‘হচ্ছে-হবে’ নয়, এবার করেই দেখাব।”
তিনি আরও বলেন, “শ্রম অধিকারের প্রশ্নে দায়িত্ব নেওয়ার পরই আমি বৈঠক শুরু করি। জেনেভার বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলি। আজ আমরা কাগজে সই করেছি, কিন্তু কাজ এখানেই শেষ নয়—এটা কেবল শুরু।”
ড. ইউনূস বলেন, “রানা প্লাজার শ্রমিকরা তাদের জীবন দিয়ে যে দায় আমাদের কাঁধে দিয়েছে, আজ তা বাস্তবায়নের পথে প্রথম ধাপ শেষ হলো। আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে যখন এটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যাবে।”
শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আজকের দিনটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন। শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এটি হবে মাইলফলক।”
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এ যাত্রা সহজ ছিল না, কিন্তু আনন্দদায়ক। জেনেভা কনভেনশনের অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে।”
আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনোন বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে একত্রে কনভেনশন বাস্তবায়নে আইএলও কাজ চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি শ্রম আইন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও সহায়তা করবে।”
আইএলও প্রতিনিধি আরও প্রস্তাব করেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো যেন ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় শ্রম সনদ গ্রহণ করে।
এই কনভেনশনগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের শ্রম খাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ আরও জোরদার হবে এবং শ্রমিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় একটি টেকসই কাঠামো গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।