এনসিপি ও জামায়াত নেতাদের প্রধান উপদেষ্টা
আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৪৯, ২২ অক্টোবর ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
আগামী সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি ও সরকারের নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ।
প্রধান উপদেষ্টা দুই দলের প্রতিনিধিদের জানান, নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যেকোনো পরিবর্তন তিনি নিজেই তদারকি করবেন এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত পৃথক বৈঠকে দুই দলের প্রতিনিধিরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, গণভোট আয়োজন এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের রোডম্যাপ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে জামায়াত ও এনসিপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা অপরিহার্য।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আমরা ইতোমধ্যে বহু পদক্ষেপ নিয়েছি, আরও নতুন উদ্যোগ সামনে দেখতে পাবেন।”
এনসিপির সঙ্গে আলোচনা
বৈঠকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। দলের পক্ষ থেকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ অংশ নেন।
নাহিদ ইসলাম বৈঠকে বলেন, “নির্বাচনের আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের রোডম্যাপ ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারকে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা এনসিপিকে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আহ্বান জানান এবং বলেন, “এই সনদ জাতির জন্য মহামূল্যবান সম্পদ। এখানে সবার অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও জানান, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে এবং এনসিপি চাইলে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিতে পারবে। নাহিদ ইসলাম জানান, কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে ইতোমধ্যে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠিয়েছেন।
জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক
এনসিপির বৈঠকের পরপরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। উপস্থিত ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ. টি. এম. মা‘ছুম ও রফিকুল ইসলাম খান।
জামায়াতের নেতারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজনের দাবি জানান। ডা. তাহের বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়া প্রয়োজন, কারণ জুলাই সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে একই দিনে গণভোট হলে ভোট প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
তারা নির্বাচনকালীন প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
প্রধান উপদেষ্টা দুই দলের প্রতিনিধিদের জানান, নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যেকোনো পরিবর্তন তিনি নিজেই তদারকি করবেন এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।