সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন সরকারি নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:০৭, ২২ অক্টোবর ২০২৫

সেন্টমার্টিন দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভঙ্গুর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণ কার্যক্রমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে সরকার। বুধবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ–২ শাখা থেকে ১২ দফা নির্দেশনা সংবলিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’–এর আলোকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। এর লক্ষ্য হলো দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে দায়িত্বশীল ও টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করা।
নৌযান ও টিকিটে কড়া নজর
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো নৌযানকে সেন্টমার্টিনগামী অনুমতি দিতে পারবে না।
পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।
সময়সূচি ও পর্যটকসংখ্যা সীমিত
নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনভ্রমণ করা যাবে—রাত্রিযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সীমিত সংখ্যক পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
নিষিদ্ধ কার্যক্রম ও পরিবেশ নির্দেশনা
সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি আয়োজন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কেয়া বনে প্রবেশ, ফল সংগ্রহ বা বিক্রয়ও বন্ধ থাকবে।
সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক–ঝিনুকসহ যেকোনো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইক বা যেকোনো মোটরচালিত যান চলাচলও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
প্লাস্টিক ও পলিথিন নিষেধ
দ্বীপে পলিথিন বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, আর একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক—যেমন চিপসের প্যাকেট, স্ট্র, চামচ, সাবান বা শ্যাম্পুর ছোট প্যাকেট, বোতলজাত পানি—বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক ও পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
টেকসই পর্যটনের লক্ষ্যে
সরকার আশা করছে, এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে। দ্বীপটি হয়ে উঠবে টেকসই পর্যটনের এক আদর্শ উদাহরণ।
পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ বাস্তবায়ন বিষয়ে আজ এক সভা অনুষ্ঠিত হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।এতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং ই–টিকেটিং সংস্থার প্রতিনিধিরা।