কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে কাশফুল দেখতে ভিড়
এম. এ. আযম, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: ১৯:১৮, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২২:৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

গ্রীষ্মের প্রখর তাপ আর বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টির পর শরৎ আসে এক স্নিগ্ধ, শান্ত রূপ নিয়ে। এই ঋতুর প্রধান আকর্ষণ দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুলের সাদা সমারোহ। কাশফুল যেন শুভ্রতার প্রতীক, যা জানান দেয় শরতের আগমন। নদীর ধারে ও খোলা মাঠে কাশফুলের বন বাতাসে দুলতে থাকে, যা দেখতে অত্যন্ত মনোরম।
কাশফুল মানেই মেঘলা আকাশ, হালকা বাতাস আর কিছু না বলা আবেগ—যা শুধু হৃদয়ই বোঝে! কাশফুলের সাদা সৌন্দর্যে লুকিয়ে থাকে এক নিঃশব্দ প্রেম, যেন প্রকৃতি নিজেই একটা কবিতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শরৎ মানেই কাশফুলের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। দিগন্ত জোড়া সাদা ফুলের এই মেলা যেন প্রকৃতির এক অমূল্য উপহার। কাশফুলের স্নিগ্ধ পরশ আর নির্মল বাতাস, এই দুটোই যথেষ্ট মনকে সতেজ করে তোলার জন্য। শরৎ সত্যিই অসাধারণ! কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়—ইচ্ছা করে ডেকে বলি, “ওগো কাশের মেয়ে–/ আজকে আমার চোখ জুড়ালো তোমার দেখা পেয়ে/ তোমার হাতে বন্দী আমার ভালোবাসার কাশ/ তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস”।
কুড়িগ্রাম জেলায় ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ রয়েছে ১৬টি নদ-নদী। এসব নদ-নদীর অববাহিকায় ৪০০-৫০০টি চর-দ্বীপচরে ফুটেছে কাশফুল। এই সব কাশফুলের বাগানে প্রতিদিন বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে। ভিড় জমাচ্ছে অপার এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটাচ্ছে। তাদের কেউ কাশবনের মাঝে নৌকায় ঘুরে বেড়ায়, কেউ কাশ বাগানে সেলফি তোলে, কেউ ভিডিও করে—সবাই নিজের মতো করে সময় উপভোগ করে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ সকলে। ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা; আর এর মধ্যে নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চরের যেদিকেই চোখ যায়, কাশফুলের শুভ্র রঙের খেলা। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও ঠাস বোনা গুচ্ছ। হঠাৎ মনে হবে যেন সেখানে সাদা চাদর বিছানো। দোল খাওয়া কাশফুলের এই সৌন্দর্য এখানে আসা পর্যটকদের মনে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া।
ধরলাপারের জয়স্বরস্বতির চর, জগমনের চর, পাংগার চর এলাকায় বিভিন্ন কাশফুল বাগানে আসা দর্শনার্থীরা জানান, ধরলা নদীর তীর—এটি অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা। খুব ভালো লাগছে। এখানে প্রতিবছর কাশফুল ফোটে; যা তাদের খুব ভালো লাগে।
দর্শনার্থী করিম, পিও ও মুক্তা জানান, জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে বিভিন্ন পর্যটক কাশফুল বাগানে আসে ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নেওয়ার জন্য। গ্রামীণ পরিবেশ ও সূর্যাস্তের সময় বেশি মানুষ ঘুরতে আসে। আমাদের চর-দ্বীপচরগুলো সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত হচ্ছে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ধরলা নদীর পশ্চিম পারে শত শত একর জমিতে কাশফুলের বাগানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে। দিনভর থাকে ছবি তোলে, ভিডিও করে। এটি পর্যটন ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার হতে পারে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, পরিবেশবান্ধব কাশফুলের দেশ ও দেশের বাইরে চাহিদা থাকায় এটি বাণিজ্যিকভাবে প্রসারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সাথে সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে ভূমিকা রাখবে। তাই জেলার নদনদী শাসন করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।