বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

সীমিত ভ্রমণকারীর দ্বীপ

লর্ড হাওয়ের অনন্য টিকে থাকার গল্প

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২২:২৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

লর্ড হাওয়ের অনন্য টিকে থাকার গল্প

ছবি সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাঝখানে ৩৭২ মাইল সমুদ্রপথে বিচ্ছিন্ন, সবুজ পাহাড়, নীল সমুদ্র আর সাদা বালুকাবেলায় মোড়ানো ছোট্ট এক দ্বীপ—লর্ড হাও আইল্যান্ড। মাত্র সাত মাইল দীর্ঘ এই দ্বীপটি পৃথিবীর স্বর্গ বলে মনে হয়। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, এখানে একসঙ্গে মাত্র ৪০০ পর্যটক প্রবেশ করতে পারেন।

সীমাবদ্ধতার রহস্য
বিশ্বজুড়ে পর্যটনশিল্প বড় হচ্ছে, ভিড় বাড়ছে, প্রকৃতি নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু লর্ড হাও দ্বীপে উল্টো নিয়ম। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা ৪০০-তেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। হোটেল–রিসোর্টের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে সরকার এই সীমা বেঁধে দিয়েছে। কারণ একটাই—প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা। ১৯৮২ সালে এই দ্বীপ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে মূলত এখানকার বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির কারণে।

প্রকৃতির অভয়ারণ্য
এখানে হাঁটলেই বোঝা যায়, দ্বীপটি অন্য রকম। পাহাড়ি অরণ্যে অর্কিড, লতাগুল্ম, বিরল পাখিরা বসবাস করে। মাউন্ট গাওয়ারের শীর্ষে রয়েছে বিপন্ন এক মেঘ অরণ্য। সমুদ্রতটে রয়েছে ‘প্রভিডেন্স পেট্রেল’ নামের অনন্য সামুদ্রিক পাখি, যা মানুষের ডাকেই ঝাঁপিয়ে নামে। দ্বীপের চারপাশে রয়েছে পৃথিবীর দক্ষিণতম প্রবালপ্রাচীর—এখানে প্রায় ৫০০ প্রজাতির মাছ, তারকা মাছ, কাঁকড়া ও সামুদ্রিক প্রাণীর সমাহার।

দ্বীপবাসীর দৃষ্টিভঙ্গি
স্থানীয়রা নিজেরাই এই নিয়ম মেনে চলেন। ছয়-সাত প্রজন্ম ধরে যারা দ্বীপে বাস করছেন, তারা বোঝেন এ জীবনযাত্রা কতটা মূল্যবান। দ্বীপের ৭০% জমি পার্ক রিজার্ভ হিসেবে ঘোষিত—সেখানে কোনো নির্মাণই নিষিদ্ধ। ফলে ৮৫% এলাকা আজও প্রাকৃতিক অরণ্যে ঢাকা। এমনকি জনসংখ্যাও সীমিত রাখা হয়েছে—বাসস্থান পাওয়ার কড়াকড়ি নিয়মের কারণে নতুন লোকজন সহজে স্থায়ী হতে পারেন না।

কড়া সুরক্ষা ও সংরক্ষণ
পর্যটকরা দ্বীপে নামার সঙ্গে সঙ্গেই টের পান কঠোর সংরক্ষণনীতি। ব্যাগ পরীক্ষা করে স্নিফার কুকুর নিশ্চিত হয়—কোনো ইঁদুর, ব্যাঙ বা অনুপ্রবেশকারী প্রাণী যেন ঢুকতে না পারে। হাঁটার পথের শুরুতেই রাখা থাকে জুতার ব্রাশিং স্টেশন, যাতে ছত্রাক ছড়াতে না পারে। ২০১৯ সালে ইঁদুর ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণী নির্মূলের পর বিরল প্রজাতির ‘উডহেন’ পাখির সংখ্যা দশগুণ বেড়েছে।
এখানে আসা মানেই ব্যস্ততা থেকে মুক্তি। সমুদ্রসৈকতে নির্জন হাঁটা, বনে পাখির ডাক, আর কয়েক মিনিট সাইকেল চালিয়ে রিফের কাছে স্নরকেলিং—সবই সহজলভ্য। ভিড় নেই, বাণিজ্যিক কোলাহল নেই। তাই যারা একবার আসেন, তাদের বুকিং তালিকা কয়েক বছর আগেই পূর্ণ হয়ে যায়।
তবু এই স্বর্গও বিপদমুক্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রবাল সাদা হয়ে যাচ্ছে, মেঘ অরণ্য শুকিয়ে যাচ্ছে। দ্বীপবাসী জানেন, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবু তারা নীতিতে অটল—“কমই বেশি।”
দ্বীপের বাসিন্দারা সাইকেল চালান, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, বর্জ্য নিজেরাই বাছাই করে প্রক্রিয়াজাত করেন। বাজারে না পাওয়া জিনিস নিজেরা উৎপাদন করেন, আবার পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। এভাবেই টিকে আছে দ্বীপের সমাজব্যবস্থা।

আজ যখন পৃথিবীর অধিকাংশ পর্যটনকেন্দ্র অতিরিক্ত ভিড়ে ক্লান্ত, তখন লর্ড হাও দ্বীপ ভিন্ন এক বার্তা দেয়—প্রকৃতিকে রক্ষা করেই প্রকৃত পর্যটন অভিজ্ঞতা সম্ভব। ৪০০ পর্যটকের সীমা শুধু সংখ্যা নয়, বরং টেকসই জীবনের প্রতীক।

লর্ড হাও দ্বীপ প্রমাণ করে—প্রকৃতিকে ভালোবাসলে, মানুষও তার পুরস্কার পায়।
 

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে বসছে ঐকমত্য কমিশন
আমি নিজেই পিআর বুঝি না: মির্জা ফখরুল
অক্টোবরে বাড়ছে ট্রিপ সংখ্যা রবিবার থেকে ১ ঘন্টা বেশি চলবে মেট্রোরেল
সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সই করবে: আইন উপদেষ্টা
ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ অবরোধ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের
পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু