ড্রাইভিং লাইসেন্সে বড় পরিবর্তন, বাধ্যতামূলক ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৪৫, ২২ অক্টোবর ২০২৫

সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সড়ক দিবস–২০২৫ উপলক্ষে বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনা সভায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুতে নতুন দিকনির্দেশনা দেন সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, “ড্রাইভিং লাইসেন্স পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা হবে। এর মূল ভিত্তি হবে প্রশিক্ষণ, এবং এর জন্য যেসব আনুষঙ্গিক কমিটি ছিল, সেগুলো বাতিল করা হবে। লাইসেন্স পেতে হলে কমপক্ষে ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রশিক্ষণ ভাতাও দেওয়া হবে।”
উপদেষ্টা জানান, বিআরটিএ-কে একটি নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্থা থেকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হবে, যাতে সাধারণ জনগণ আরও সহজে সেবা পায়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও বিআরটিসির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে কাজে লাগিয়ে দুই ধরণের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হবে—একটি সড়কের চিহ্ন ও সাইন বোঝার জন্য, অন্যটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা অর্জনের জন্য।
উপদেষ্টা আরও জানান, প্রশিক্ষণার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা এবং ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী মাসের মধ্যেই নতুন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে। এসব গাড়িই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারের বৃদ্ধি এবং তার সঙ্গে দুর্ঘটনা বাড়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা ১০ হাজার হেলমেট বিতরণ করব। এতে আরোহীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।”
নিরাপদ সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় অনেক সময় প্রাণহানি ঘটে। এজন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মোহাম্মদ খোদা বকশ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের চালকদের আন্তর্জাতিক মানে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি, যা দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বড় প্রতিবন্ধকতা।
তিনি বলেন, “প্রযুক্তি এখন আন্তর্জাতিক। গাড়ি একই রকম, কিন্তু চালককে জানতে হবে নিয়মকানুন। এজন্য আধুনিক ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন করতে হবে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”
মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা উদ্যোগ নিন, সড়ককে নিরাপদ রাখতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দুর্ঘটনা শুধু চালকের ভুলে হয় না—সড়কের অবস্থা ও ব্যবস্থাপনাও সমানভাবে দায়ী।”