মানবতাবিরোধী অপরাধ
শেখ হাসিনার মামলায় যুক্তিতর্ক শেষ, আজ ধার্য হবে রায়ের দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামীর যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “আজ (বুধবার, ২২ অক্টোবর) পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (আজ ২৩ অক্টোবর) চিফ প্রসিকিউটর ও অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য রাখবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের দিন ধার্য করা হবে।”
এই মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
প্রসিকিউশন মনে করে, রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের জবানবন্দিতে ‘ট্রু অ্যান্ড ফুল ডিসক্লোজার’ (সত্য ও পূর্ণ প্রকাশ) হয়েছে।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল কোনো আইনজীবী নিয়োগ না করায় ট্রাইব্যুনাল তাদের পক্ষে আমির হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়।
বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার পর আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন। টানা তিন দিনের যুক্তি শেষে তিনি তার মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে খালাসের আবেদন জানান।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তিতর্কে সাক্ষীদের জবানবন্দি খণ্ডন করা হয়। এসময় সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে আমির হোসেন বলেন, “রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য অবিশ্বাস্য।”
তিনি দাবি করেন, “রাজসাক্ষী মামুন বাঁচার জন্য অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখেছেন। আর মাহমুদুর রহমান ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক সাক্ষ্য দিয়েছেন।”
পরে রাজসাক্ষী মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ তার যুক্তি উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম ও সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা।
এর আগে গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছিলেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি আদালতে বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। আমি রাজসাক্ষী হিসেবে সত্য প্রকাশ করতে চাই।”
একইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে। মামলায় তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের নথি মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা ও শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।
এদিকে যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ায় এখন মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হওয়ার অপেক্ষায়। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হবে বলে প্রসিকিউটর জানিয়েছেন।