কেনিয়ার জনপিতা রাইলা ওডিঙ্গার শেষযাত্রায় লাখো মানুষের ঢল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:৪৪, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

কেনিয়ার জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গার দেহবহনকারী হেলিকপ্টার শনিবার যখন পশ্চিমাঞ্চলের কিসুমু শহরে অবতরণ করে, তখন হাজারো মানুষ “বাবা” বলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। দেশজুড়ে চলমান শোকানুষ্ঠান শনিবার পৌঁছায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।
৮০ বছর বয়সী রাইলা ওডিঙ্গা গত বুধবার ভারতের একটি হাসপাতালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকেই পুরো কেনিয়া জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে, বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের লুয়ো জনগোষ্ঠীর মধ্যে, যারা ওডিঙ্গাকে ‘জনপিতা’ হিসেবে মানতেন।
শনিবার কিসুমুর স্টেডিয়ামে তার মরদেহ পৌঁছালে শোকাহত মানুষ নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। অনেকে গ্যালারির দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে মরদেহের এক ঝলক দেখার চেষ্টা করেন। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ১০০-রও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে সেবাদাতারা জানিয়েছেন।
২০ বছর বয়সী ওডিঙ্গা-সমর্থক ডন পেলিডো বলেন, “বাবা ছাড়া আমরা মৃত। এখন আমাদের আর কোথাও যাওয়ার নেই।”
এর আগেও রাজধানী নাইরোবিতে তার শোকানুষ্ঠানকে ঘিরে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হন। শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর উপস্থিতিতে জনতার চাপে পদদলিত হয়ে আরও দুজন মারা যান।
রাইলা ওডিঙ্গা কেনিয়ার আধুনিক রাজনীতির সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের একজন হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পাঁচবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জিততে পারেননি।
তবে দেশকে একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল নির্ণায়ক। ২০১০ সালের সংবিধান প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তার মৃত্যু কেনিয়ার রাজনীতিতে এক বিরাট শূন্যতা তৈরি করেছে। সমালোচকেরা বলছেন, তিনি মৃত্যুর আগে উত্তরসূরি তৈরির কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেননি। কিসুমুর এক দোকান মালিক মোরিন ওওয়েসি বলেন, “আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে, তিনি আর নেই। মনে হচ্ছে, সবকিছু এক দুঃস্বপ্ন।”
শনিবার কিসুমুতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার মরদেহ শায়িত থাকার পর, তা নিয়ে যাওয়া হবে সিয়ায়া জেলার বোন্ডো এলাকায়, পারিবারিক সমাধিস্থলে, যেখানে পারিবারিকভাবে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
রাইলা ওডিঙ্গার মৃত্যুর পর তার রাজনৈতিক আন্দোলন এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রুটোর সঙ্গে গড়া আপস-মীমাংসা টিকবে কি না—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই তাকে বাস্তববাদী সমঝোতার জন্য সমালোচনা করেছিল, বিশেষ করে গত দুই বছরের শাসনব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক সংকটের সময়।
আগামী ২০২৭ সালের নির্বাচনের আগে এই অনিশ্চয়তা দেশজুড়ে নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কেনিয়ার রাজনীতির ইতিহাসে রাইলা ওডিঙ্গার নাম থাকবে গণতন্ত্র, প্রতিবাদ ও জনগণের অধিকারের প্রতীক হিসেবে—যিনি পাঁচবার ব্যর্থ হয়েও জনগণের হৃদয়ে স্থান হারাননি।