রাকসু নির্বাচন
১৭ হলের ২৫৫ পদের ২৩৪টিতে জয়ী শিবির, একটি পদও পায়নি ছাত্রদল
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭:৩৬, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে একচেটিয়া ও নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রতিটি হল সংসদের ভিপি, জিএস, এজিএস পদে এই সংগঠনের সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। পাঁচটি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলসহ মোট ১৭টি হলের ২৫৫টি পদের মধ্যে ২৩৪টিতে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা।
অন্যদিকে, বড় ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদলের। এই সংগঠনের সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা ১৭ হলের একটি পদেও জিততে পারেননি। আশা শুধু কয়েকটি পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছেন তারা।
অর্থাৎ ১৭ হলের ২৫৫টি পদের মধ্যে ২৩৪টিতে জয়ী ছাত্রশিবির। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে জয় পেয়েছে ৫টি হলে। ছাত্রদলের কোনো প্রার্থী কোন হলে জয় পায়নি।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাকসুতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে সে রাত থেকেই ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি পদের মধ্যে ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদে জয় পান শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে এই প্রথমবারের মতো রাকসুতে নেৃতত্বে আসে সংগঠনটি।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ নির্বাচনেও একচেটিয়া জয় পায় সংগঠনটি।
হলভিত্তিক ফলাফল: শিবিরের দাপট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১টি ছাত্র হল ও ৬টি ছাত্রী হল মিলিয়ে মোট ১৭টি হল সংসদে নির্বাচন হয়। প্রতিটি হল সংসদে রয়েছে ১৫টি করে পদ। এর মধ্যে শীর্ষ ৫১ পদেই (ভিপি-জিএস-এজিএস) এই প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
এর মধ্যে পাঁচটি হলে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ১৫টির সব, অর্থাৎ ৭৫টি পদেই জয় পেয়েছে। হলগুলো হলো: শহীদ হবিবুর রহমান হল, নবাব আব্দুল লতিফ হল, মাদার বখ্শ হল, সৈয়দ আমীর আলী হল ও মন্নুজান হল।
এর মধ্যে শহীদ হবিবুর রহমান হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে আহমদ আহসান উল্লাহ ফারহান, আশিক শিকদার ও মো. শহীদুল ইসলাম সুমন; মাদার বখ্শ হলে ভিপি পদে মো. রুবেল আলী, জিএস পদে মো. ইব্রাহিম হোসাইন ও এজিএস পদে মো. আবু রায়হান; মন্নুজান হলে ভিপি পদে সুমাইয়া জাহান, জিএস পদে তাসমেরী জাহান (তন্নি) ও এজিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন; সৈয়দ আমীর আলী হলে ভিপি পদে মো. নাঈম ইসলাম, জিএস পদে মো. সাব্বির হোসাইন ও এজিএস পদে মুন্না ইসলাম এবং নবাব আব্দুল লতিফ হলে ভিপি পদে নেয়ামত উল্লাহ, জিএস পদে মো. নুরুল ইসলাম (শহীদ) ও এজিএস পদে রনি হাসান জয় পেয়েছেন।
অন্য হলগুলোতেও শিবির
অন্যান্য হলের মধ্যে বিজয়-২৪ হলে সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদ ছাড়া বাকি সব পদেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এই হলে ভিপি পদে মো. রাছেল মিয়া, জিএস পদে ইমরুল হাসান (মিশকাত) ও এজিএস পদে মো. শাহাদাত হোসেন (সাকিব) জয়ী হয়েছেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান হল সংসদের ১৫টি পদের মধ্যে শুধু চারটি পদ হারিয়েছে শিবির। পদগুলো হলো- বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, সহবিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য। বাকি ১১টি পদে জয় পেয়েছে। ভিপি হয়েছেন মোজাম্মেল হক, জিএস আরিফুল ইসলাম ও এজিএস মো. ইসরাফিল হোসেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল সংসদের ১৫ পদের মধ্যে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া বাকি সব পদে শিবির জয় পেয়েছে। এই হল সংসদে ভিপি হয়েছেন কাওসার হাবিব, জিএস মো. সাচ্ছু হোসেন ও এজিএস মো. ইমরুল হাসান।
শহীদ শামসুজ্জোহা হল সংসদের ১৫ পদের মধ্যে নির্বাহী সদস্যের একটি পদ ছাড়া বাকি সব পদে শিবির জয়ী হয়েছে। ভিপি হয়েছেন আশিকুর রহমান (সোহাগ), জিএস সোয়াইব হোসেন ও এজিএস মোস্তাফিজুর রহমান।
শাহ মখদুম হল সংসদে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া বাকি ১৪টি পদে শিবির-সমর্থিত প্যানেল জয়লাভ করেছে। ভিপি, জিএস ও এজিএস হয়েছেন যথাক্রমে মো. শামিম আলাম পাটোয়ারি, বায়জীদ ও মো. জাকারিয়া।
ছাত্রী হলেও একচেটিয়া জয়
ছাত্রী হলগুলোতেও শিবিরসমর্থিত প্যানেল একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে। রহমতুন্নেসা ও বেগম খালেদা জিয়া হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন অনেক প্রার্থী। অন্য হলগুলোতেও শীর্ষ পদগুলোতে জয়ী হয়েছেন শিবিরপন্থীরা।
এর মধ্যে তাপসী রাবেয়া হলে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ১৪ জনের মধ্যে ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক প্রার্থী ছাড়া সবাই জয় পেয়েছেন। ভিপি পদে মরিয়ম খাতুন, জিএস পদে তাওহীদা আখতার ও এজিএস পদে খাদিজা আক্তার জয় পেয়েছেন।
জুলাই-৩৬ হলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া ১৩ জনের প্যানেলের ১১ জনই জয়ী হয়েছেন। ভিপি হয়েছেন সৈয়দা সমাপিকা আহমদ (সিমি), জিএস তাসফিয়া তাবাসসুম ও এজিএস তাওহিদা ইয়াসমিন (মাহমুদা)।
বেগম রোকেয়া হলে ১৪ জনের প্যানেলের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলোতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। ভিপি, জিএস ও এজিএস হয়েছেন যথাক্রমে অর্পণা হক (মুগ্ধ), মোসা. লায়লা খাতুন ও মোছা. শাহনাজ পারভীন।
রহমতুন্নেসা হল সংসদে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ১৪ জনের প্যানেলের ১৪ জনই বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে কোনো প্রার্থী না থাকায় ৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। সাইফুন নাসিরা ভিপি, হাবিবা আক্তার (রিয়া) জিএস ও আফসানা মিমি এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়া হলেও ১৪ জনের প্যানেলের সবাই জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে এই প্যানেলের ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। ভিপি পদে সাবরিনা মারজান, জিএস জারিন তাসনিম রিফাহ ও এজিএস মোছা. পারভীন আরা নির্বাচিত হয়েছেন।
হলে শূন্য প্রাপ্তি ছাত্রদলের
কেন্দ্রিয় সংসদের পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদের ১১টি হলে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছিল ছাত্রদল। তবে প্রতিটি হল সংসদের ১৫টি পদের মধ্যে কোনো পদেই তাদের প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেননি। তবে কিছু কিছু হলে কয়েকটি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের সঙ্গে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।