একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন বাবা-মেয়ে

নাটোরের লালপুরে ঘটেছে এক বিরল ও অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা।একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এক বাবা ও তার মেয়ে। বিশেষত্ব হলো, ফলাফলে মেয়েকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছেন বাবা আব্দুল হান্নান। তিনি পেয়েছেন জিপিএ ৪.৩৩, আর তার মেয়ে হালিমা খাতুন পেয়েছেন জিপিএ ৩.৭১।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ফলাফল প্রকাশের পরই এ খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন এই বাবা-মেয়ে জুটি। স্থানীয়রা বলছেন, আব্দুল হান্নান সমাজে শিক্ষার নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

জানা যায়, গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছোট ছেলে হান্নান ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এরপর সংসার জীবনে মনোযোগ দিলেও শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ কখনও নিভে যায়নি। দীর্ঘ ২৫ বছর পর, ২০২৩ সালে রুইগাড়ি হাই স্কুল থেকে আবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেন তিনি। তখন কাউকে না জানিয়ে নিজের মেয়ের সঙ্গেই পরীক্ষায় বসেন, যা পরে আলোচনার জন্ম দেয়।

পরবর্তীতে ২০২৫ সালে বাঘা কাকড়ামারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন আব্দুল হান্নান, আর তার মেয়ে হালিমা খাতুন অংশ নেন গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে। ফলাফল প্রকাশের পর দুজনেই সফলভাবে উত্তীর্ণ হন।

হালিমা বলেন, `পরিবারে দারিদ্র্য থাকলেও বাবার পড়াশোনার আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা চাই, একসঙ্গে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে।‘
অন্যদিকে বাবা হান্নান বলেন, `ছোটবেলায় অভাবের কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। মেয়েকে পড়াতে গিয়ে নিজেরও পড়ার ইচ্ছা জেগেছে। বয়স কোনো বাধা নয়—ইচ্ছা থাকলে শেখা সম্ভব, আমি সেটাই প্রমাণ করেছি।‘

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, `এটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা। একসঙ্গে বাবা-মেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন—এটি সমাজে শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।‘