সমালোচনার মধ্যেই ইস্ট উইং ভাঙ্গার কাজ চলছে
নতুন বলরুমের ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৫৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২১:২৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ের বর্তমান কাঠামো ভেঙে ফেলতে হবে। তারপর সেখানে একটা বড় বলরুম নির্মাণ করা হবে । এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
সোমবার থেকেই সেখানে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএসকে জানিয়েছেন, এই সপ্তাহের মধ্যেই পুরো ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পের কথা এই বছরের গ্রীষ্মে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তার বলরুম নির্মাণ প্রকল্প “বর্তমান ভবনে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না”।
তবে ভবন ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। ট্রাম্প এই সমালোচনার জবাবে বলেন, “আমরা এত স্বচ্ছভাবে কাজ করছি যা এর আগে কেউ করেনি।”
তবে সংরক্ষণবিদ ও বিরোধী রাজনীতিবিদদের সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছে, কারণ প্রকল্পের ব্যাপ্তি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অনেকে বলছেন, এই কাজের আগে আরও জনপর্যালোচনা বা তদারকির প্রয়োজন ছিল।
হোয়াইট হাউসকে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে ন্যাশনাল হিস্টোরিক প্রিজারভেশন অ্যাক্ট ১৯৬৬ আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে— ফলে সাধারণত ঐতিহাসিক স্থাপনায় যেভাবে জনপর্যালোচনা হয়, সেটি এখানে বাধ্যতামূলক নয়।
তবে আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ানদের সংস্থা সোসাইটি অব আর্কিটেক্টচারাল হিস্টোরিয়ানস এর ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রিয়া জৈন বলেন, “আমি অবাক হব যদি হোয়াইট হাউসে আগে সেই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ না করা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি বহু বছর ধরে হাজার হাজার ভবনে মানা হচ্ছে, এবং এটিই সর্বোত্তম চর্চা।”
হোয়াইট হাউস দুই শতাব্দী ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঐতিহাসিক বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইস্ট উইং নির্মিত হয়েছিল ১৯০২ সালে এবং সর্বশেষ সংস্কার হয় ১৯৪২ সালে।
এই অংশে ফার্স্ট লেডি ও তার স্টাফদের অফিস থাকে, এবং কিছু বিশেষ সভা ও অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্প বলেন, ভবনটি বছরের পর বছর নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে এবং “মূল কাঠামো থেকে অনেক দূরে সরে গেছে”।
তিনি আরও বলেন, “এটি কখনো খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভাবা হয়নি,” এবং এই পরিবর্তনের প্রয়োজন “অন্তত ১৫০ বছর ধরে অনুভূত হচ্ছিল।”
তিনি জানান, নির্মাণ প্রকল্পের পুরো অর্থায়ন করছেন তিনি নিজে এবং কয়েকজন বন্ধু । এছাড়া সামরিক বাহিনীও এতে যুক্ত রয়েছে।
বিবিসির প্রকাশিত একটি স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ের পূর্ব প্রান্তের একাংশে ধ্বংসের কাজ চলছে।
ট্রাম্প সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ঘোষণা দেন যে, “খুব প্রয়োজনীয়” বলরুমের জন্য “ভিত্তি খোঁড়া শুরু হয়েছে।”
তিনি বলেন, ইস্ট উইং “সম্পূর্ণ আলাদা” ভবন, যদিও এটি মূল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিবিএসকে জানান, ইস্ট উইং আধুনিকায়নের মধ্য দিয়েই নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন করা হচ্ছিল, কিন্তু পরিকল্পনা পর্যায়ে এসে দেখা যায়, পুরো ভবন ভেঙে ফেলা সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হবে।
এদিকে ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর হিস্টরিক প্রিজারভেশন— যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান— হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এই প্রকল্প নিয়ে “গভীর উদ্বেগ” জানিয়েছে।
তারা ট্রাম্পকে কাজ স্থগিত করতে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, হোয়াইট হাউস একটি জাতীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং এর পরিবর্তন পরিকল্পনা জনসম্মুখে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
কয়েকজন ডেমোক্র্যাটও সমালোচনা করেছেন, যার মধ্যে আছেন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন।
তিনি এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ লিখেছেন, “হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাড়ি নয়— আর তিনি সেটিকে ধ্বংস করছেন।”