শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

সফট সেল ব্যান্ডের ডেভ বল আর নেই

শেষ অ্যালবাম `ডানসেটেরিয়া’ আসবে আগামী বসন্তে

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১:৫০, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:০৬, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

শেষ অ্যালবাম `ডানসেটেরিয়া’ আসবে আগামী বসন্তে

১৯৮১ সালে লিডস শহর থেকে উঠে আসা এক অসম্ভব জুটির গান ‘টেইন্টেড লাভ’ বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। ষাটের দশকের এক অচেনা সোল গানের বরফ-ঠান্ডা ইলেকট্রনিক সংস্করণ দিয়েই তারা ৮০–এর দশকের সিনথ-পপ যুগের এক মানদণ্ড স্থাপন করেন।

এই যুগল ছিলেন মার্ক আলমন্ড ও ডেভ বল—যিনি ছিলেন ব্যান্ডের আসল সঙ্গীত শক্তি। আলমন্ডের সাহসী, প্ররোচনামূলক কথাগুলির সঙ্গে মিলিয়ে বল তৈরি করেছিলেন ভয়াল, বহুস্বর বিশিষ্ট সিনথেসাইজার সুরের জগৎ।

“টেইন্টেড লাভ” বিক্রি হয়েছিল ২ কোটি ১০ লক্ষের বেশি কপি। পরবর্তী সময়ে “সে হ্যালো, ওয়েভ গুডবাই”, “টর্চ”–এর মতো হিট গান আসলেও, ১৯৮৪ সালে ব্যান্ডটি ভেঙে যায়। পরে ২০০০-এর দশকে আবার একত্রিত হয়ে নতুন অ্যালবাম তৈরি করে—বল-এর মৃত্যুর ঠিক আগেই সেটির কাজ শেষ হয়।
বল লন্ডনের বাসায় ২২ অক্টোবর, বুধবার শান্তিতে ঘুমের মধ্যেই মারা যান বলে তার পরিবার জানিয়েছে।

এর মাত্র দুই মাস আগেই, তারা হেনলি-অন-থেমসের রিওয়াইন্ড উৎসবে ২০ হাজার দর্শকের সামনে প্রধান শিল্পী হিসেবে পারফর্ম করেন।
সে সময় বল হুইলচেয়ারে বসে বাজাচ্ছিলেন; গত দুই বছর ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি।

তিনি নিজেই বলেছিলেন, “আমি নিজেকে বেশ ক্ষতি করেছি—মেরুদণ্ডের নিচের হাড় ভেঙেছে, পাঁচটি পাঁজর ফেটেছে, কবজিও ভেঙে গেছে।”
পরবর্তীতে নিউমোনিয়া ও সেপসিসে আক্রান্ত হয়ে তাকে সাত মাস হাসপাতালে থাকতে হয়।

তবুও ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে তিনি মানসিকভাবে খুব ভালো অবস্থায় ছিলেন, কারণ তখনই তৈরি হচ্ছিল সফট সেলের নতুন অ্যালবাম “ডানসেটেরিয়া”, যা প্রকাশিত হবে আগামী বছর।

মার্ক আলমন্ড বলেছেন,“আমরা কয়েক দিন আগেই অ্যালবামের কাজ শেষ করেছি। ডেভ খুব খুশি ছিল, নতুন গানগুলো নিয়ে তার মনোযোগ ও উদ্দীপনা ছিল দুর্দান্ত। ২০২৬ তার জন্য আনন্দের বছর হওয়ার কথা ছিল। এই সান্ত্বনাই পাচ্ছি যে সে নিজের শেষ কাজটি শুনে গর্বিত ছিল।”

তিনি আরও বলেন,“ডেভ, তুমি আমার জীবনের এক বিশাল অংশ ছিলে। তোমার না থাকলে আমি আজকের আমি হতাম না।”

প্রযুক্তির জাদুকর থেকে সিনথ-পপের পথিকৃৎ

ডেভ বল পরে “দ্য গ্রিড” নামের টেকনো-যুগল ব্যান্ড গঠন করেন, যা ১৯৯৪ সালে “সোয়াম্প থিং” গান দিয়ে যুক্তরাজ্যের টপ ১০–এ জায়গা করে নেয়।
তার সহশিল্পী রিচার্ড নরিস স্মরণ করেছেন বলের “অবিরাম হাসি” ও “অটল বন্ধুত্বের” কথা।

তিনি লিখেছেন,“যুগল ব্যান্ডে কাজ করা ভিন্ন এক সম্পর্ক—অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধন। আমরা একসঙ্গে অসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। ধন্যবাদ, ডেভ।”

শৈশব থেকে গানের পথে

১৯৫৯ সালে ইংল্যান্ডের চেস্টারে জন্ম নেন বল। দেড় বছর বয়সে তাকে দত্তক নেওয়া হয়; ব্ল্যাকপুলে দত্তক পিতা-মাতা ডোনাল্ড ও ব্রেন্ডা বলের কাছে বড় হন তিনি।
লিডস পলিটেকনিকে শিল্পকলায় পড়তে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মার্ক আলমন্ডের। দু’জনেই নর্দার্ন সোল সঙ্গীত ভালোবাসতেন। ১৯৭৭ সালে তারা মিলে সফট সেল গঠন করেন।

রেডিও ১–এর জন পিল তাঁদের প্রথম ইপি সম্প্রচার করেন—এতেই শুরু হয় যাত্রা।ডেভ বল কিশোর বয়সে বিবিসির বিজ্ঞানধর্মী অনুষ্ঠান “টুমরোস ওয়ার্ল্ড”–এ ক্রাফটওয়ার্ক ব্যান্ডের সিনথেসাইজার পরিবেশনা দেখে মুগ্ধ হন। এরপর থেকে তিনি ইলেকট্রনিক সাউন্ডে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন।

‘টেইন্টেড লাভ’ এবং বিশ্বজোড়া সাফল্য

১৯৮১ সালে “টেইন্টেড লাভ” যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় সর্বাধিক বিক্রিত সিঙ্গেল হয়। গ্যারি নিউম্যান, হিউম্যান লিগ ও আলট্রাভক্সের সঙ্গে সফট সেলও হয়ে ওঠে ৮০–এর দশকের সিনথ-পপ আন্দোলনের মুখ।তাদের প্রথম অ্যালবাম “নন-স্টপ ইরোটিক ক্যাবারে” থেকে আসে আরও দুইটি টপ ফাইভ হিট—“বেডসিটার” এবং “সে হ্যালো, ওয়েভ গুডবাই”।

এরপরের বছর “টর্চ” এককটি পৌঁছে যায় নাম্বার টু–তে।

কিন্তু খ্যাতির সঙ্গে আসে ফাঁদও। বল পরে বলেন,“হঠাৎ টাকাপয়সা, বাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ—সবই ভালো লাগত, কিন্তু সঙ্গে এল নতুন মাদক, যা বিরক্তি দূর করতে আমরা ব্যবহার করতাম। এটা অনেক ব্যান্ডেরই গল্প।”

এই সময়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়লেও তারা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যালবাম তৈরি করেন—“দ্য আর্ট অব ফলিং অ্যাপার্ট”।

শেষ অ্যালবাম “দিস লাস্ট নাইট ইন সোডম” প্রকাশের পর ১৯৮৪ সালে সফট সেল ভেঙে যায়।

নতুন জীবন, নতুন সুর

মার্ক আলমন্ড একক ক্যারিয়ারে সফল হন (“সমথিং’স গট আ হোল্ড অব মাই হার্ট”), আর বল “দ্য গ্রিড”–এর মাধ্যমে অ্যাসিড হাউস ও অ্যামবিয়েন্ট পপ মিশিয়ে নতুন ধারা সৃষ্টি করেন।

২০০১ সালে সফট সেল পুনর্মিলিত হয়ে “ক্রুয়েলটি উইদাউট বিউটি” অ্যালবাম প্রকাশ করে। ২০১৮ সালে ও–টু এরেনায় অনুষ্ঠিত বিদায়ী কনসার্টেও তাদের জনপ্রিয়তা টিকে ছিল অটুট।

কিন্তু ২০২০ সালের কোভিড লকডাউনে তারা আবার একত্রে কাজ শুরু করেন—ফলাফল “হ্যাপিনেস নট ইনক্লুডেড” অ্যালবাম।

ডেভ বল তখন বলেছিলেন, হাসপাতালের অভিজ্ঞতা এবং মর্ফিনের প্রভাবে শোনা অদ্ভুত শব্দগুলোই নাকি নতুন গানগুলোর সাউন্ডে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
শেষ অ্যালবাম “ডানসেটেরিয়া”–র চূড়ান্ত মিক্স তিনি মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই শুনে গেছেন। এটি প্রকাশিত হবে ২০২৬ সালের বসন্তে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন