সিনেটে ক্রিস্টেনসেন
বড় প্রতিবেশীদের ছায়ায় থাকায় যথাযথ মনোযোগ পায় না বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৩, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১১:২৪, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, বড় প্রতিবেশীদের ছায়ায় থাকার কারণে দেশটি অনেক সময় যথাযথ মনোযোগ পায় না। তবে কৌশলগত অবস্থান বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে— যা তাকে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তুলেছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশন্স’-এর সামনে এক শুনানিতে এ মন্তব্য করেন ক্রিস্টেনসেন।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ সেপ্টেম্বর তাকে বাংলাদেশে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেন।
মার্কিন নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন দেন এবং সেটি অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে সিনেট অনুমোদন দিলে নিয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। সেই ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনেট কমিটিতে ক্রিস্টেনসেনের শুনানি হয়। সিনেটের ওয়েবসাইটে এই শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সেখানে বক্তব্যের শুরুতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিরও এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, সিনেটের অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর ও ফলপ্রসূ করার প্রত্যাশা রাখেন।
এ সময় ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন আরও বলেন, বাংলাদেশে আগামী বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। নতুন সরকার এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নতুন পথ খুঁজে নিতে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের অভিযাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ এখন একটি নতুন অধ্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী বছরের শুরুতে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা হবে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি ঐতিহাসিক মোড়।”
ক্রিস্টেনসেন আরও বলেন, “রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আমি কাজ করব।”
এর আগে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকবিষয়ক কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন।
তিনি আরও বলেন, “এশিয়ার অন্যতম নতুন ‘টাইগার’ হিসেবে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখিয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ তার জনগণের সহনশীলতা ও দৃঢ়তার প্রতীক।”
রাষ্ট্রদূত হিসেবে অনুমোদন পেলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণ, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমানো ও বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে কাজ করবেন বলে জানান।
এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট প্রসঙ্গে ক্রিস্টেনসেন বলেন, “বাংলাদেশ গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে। ২০১৭ সাল থেকে এই সংকটে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে।”
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। তাই আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আরও আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন পেলে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবেন।
