কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করলেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৩০, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৪, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি কানাডার সঙ্গে চলমান সব বাণিজ্য আলোচনা অবিলম্বে বন্ধ করছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, কানাডা এমন একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে যেখানে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানকে শুল্কবিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
তিনি লেখেন, “তাদের জঘন্য আচরণের জন্য, কানাডার সঙ্গে সব বাণিজ্য আলোচনা এখুন থেকে বন্ধ করা হলো।”
বর্তমানে ট্রাম্প কানাডা থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে তার প্রথম মেয়াদে করা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা) চুক্তির আওতায় থাকা কিছু পণ্য এ থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, অন্টারিও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি আসন্ন নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে যে বৈশ্বিক শুল্ক আইনসংক্রান্ত মামলা শুনানি হবে, সেটিতে ‘হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে’ তৈরি করা হয়েছে।
সেই মামলাটি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে ক্ষমতার সীমা ও তার প্রধান অর্থনৈতিক নীতির বৈধতা নির্ধারণে বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদি আদালত রায় দেয় শুল্কগুলো অবৈধ, তবে ওয়াশিংটনকে বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে হতে পারে।
বিজ্ঞাপনটি প্রায় এক মিনিট দীর্ঘ এবং এতে ১৯৮৭ সালে রিগানের একটি জাতীয় রেডিও ভাষণের অংশ ব্যবহৃত হয়েছে। ভিডিওতে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার পতাকা এবং বন্দর এলাকার দৃশ্যের ওপর রিগানের কণ্ঠ শোনা যায়—“যখন কেউ বলে বিদেশি আমদানির ওপর শুল্ক বসানো যাক, তখন তা দেশপ্রেমিকের কাজ মনে হয়, কিন্তু তা কেবল সাময়িকভাবে কার্যকর হয়। দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা প্রতিটি আমেরিকানের ক্ষতি করে— শ্রমিক ও ভোক্তা উভয়ের।”
রিগান আরও সতর্ক করেছিলেন—“উচ্চ শুল্কের ফলে বিদেশি দেশগুলোর পাল্টা প্রতিশোধ আসে, কঠোর বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়, বাজার ভেঙে পড়ে, শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারায়।”
রোনাল্ড রিগান ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অন্টারিও সরকার রিগানের বক্তব্যের অডিও-ভিডিও পরিবর্তন করে ব্যবহার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি।
তারা বলেছে, বিজ্ঞাপনটি রিগানের বক্তব্যকে “ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে” এবং ফাউন্ডেশন বর্তমানে আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড, যিনি ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির প্রকাশ্য সমালোচক, বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পোস্টে লেখেন—“আমরা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কানাডাবিরোধী শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করব না।”
ফোর্ডের নেতৃত্বাধীন প্রদেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের একটি, বিশেষ করে গাড়ি ও ইস্পাত শিল্পে। ট্রাম্পের আগের হুমকির জবাবে ফোর্ড বলেছিলেন, প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে প্রস্তুত।
মার্ক কারনি ও ডাগ ফোর্ড এখনো ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বিতর্কিত ওই বিজ্ঞাপনটি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারে ৭৫ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৫০ লাখ কানাডীয় ডলার (প্রায় ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় হয়েছে।
ট্রাম্প কানাডীয় ধাতু ও গাড়ির ওপর ৫০% ও ২৫% পর্যন্ত খাতভিত্তিক শুল্ক আরোপ করেছেন। এতে কানাডার বহু শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সংকট ও আর্থিক চাপ বেড়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছর শুরুর দিকে চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাসও একই রকম একটি রিগান বক্তৃতার অংশ ব্যবহার করে ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্কনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
সূত্র: বিবিসি
