রাশিয়া থেকে তেল কেনা স্থগিত চীনের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:১২, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:৪০, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলো— পেট্রোচায়না, সিনোপেক, সিএনওওসি এবং ঝেনহুয়া অয়েল—আপাতত সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকওইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরই চীন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক বাণিজ্যিক সূত্র বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে আরও বলেছে, এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো, যখন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সমুদ্রপথের তেল ক্রেতা ভারতও ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা মানতে মস্কো থেকে তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমাতে যাচ্ছে।
ফলে রাশিয়ার দুই প্রধান ক্রেতা—চীন ও ভারতের চাহিদা হ্রাস পেলে মস্কোর তেল রাজস্বে ব্যাপক চাপ পড়বে, পাশাপাশি বিশ্বের প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোকে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে এবং এতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে।
সূত্রগুলোর মতে, পেট্রোচায়না, সিনোপেক, সিএনওওসি ও ঝেনহুয়া অয়েল অন্তত স্বল্পমেয়াদে রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল কেনাবেচা থেকে বিরত থাকবে—মূলত নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি বিবেচনায়।
এই চারটি কোম্পানিই তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
চীন প্রতিদিন সমুদ্রপথে প্রায় ১৪ লাখ ব্যারেল রাশিয়ান তেল আমদানি করে, যার অধিকাংশই ছোট পরিশোধনাগার বা তথাকথিত “টিপট” কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কেনা হয়।
ভর্টেক্সা অ্যানালিটিকস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে চীনা রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর দৈনিক রাশিয়ান তেল ক্রয় ছিল ২.৫ লাখ ব্যারেলের নিচে; আর পরামর্শক সংস্থা এনার্জি অ্যাসপেক্টসের হিসাব অনুযায়ী তা ছিল ৫ লাখ ব্যারেল।
সূত্র জানিয়েছে, সিনোপেকের বাণিজ্যিক শাখা ইউনিপেক গত সপ্তাহে রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধ করেছে, যুক্তরাজ্য রসনেফট ও লুকওইলসহ কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠান এবং ‘শ্যাডো ফ্লিট’ জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর। রসনেফট ও লুকওইল সাধারণত চীনা ক্রেতাদের সরাসরি নয়, বরং মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে তেল বিক্রি করে থাকে।
স্বাধীন পরিশোধনাগারগুলোও আপাতত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে ক্রয় স্থগিত করতে পারে, তবে সুযোগ থাকলে তারা রাশিয়ান তেল কেনা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবে, বলেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে নভেম্বর মাসে লোডিংয়ের জন্য ইএসপিও ক্রুডের অফার আইস ব্রেন্টের তুলনায় প্রতি ব্যারেল ১ ডলার প্রিমিয়ামে নেমে আসে, যেখানে অক্টোবরের শুরুর লেনদেনে তা ছিল ১.৭০ ডলার প্রিমিয়ামে।
চীন প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ ব্যারেল রাশিয়ান তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করে, যা পুরোপুরি পেট্রোচায়না পরিচালনা করে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী মনে করেন, এই সরবরাহ নিষেধাজ্ঞার তেমন প্রভাব ফেলবে না।
ভারত ও চীন এখন বিকল্প সরবরাহ উৎস খুঁজবে—ফলে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা থেকে নিষেধাজ্ঞামুক্ত তেলের দাম বেড়ে যাবে বলে বাণিজ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে।
