ইতালিতে চার্চে যাজকদের যৌন নির্যাতনের শিকার ৪,৪০০ জন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:০১, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:১৫, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ইতালিতে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ মানুষ ক্যাথলিক পুরোহিতদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘রেতে ল’আবুসো’। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে নাবালক শিশু ছাড়াও সন্ন্যাসিনী, প্রতিবন্ধী ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সেস্কো জানার্দি জানিয়েছেন, এই পরিসংখ্যান এসেছে ভুক্তভোগীদের বয়ান, বিচারিক সূত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে। যদিও সংগঠনটি উল্লেখ করেনি, অভিযোগগুলো কত বছরের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
রেতে ল’আবুসোর প্রতিবেদন নিয়ে ইতালির বিশপ সম্মেলন কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে সম্প্রতি ভ্যাটিকানের শিশু সুরক্ষা কমিশন এক রিপোর্টে জানায়, ইতালির ২২৬টি ডায়োসিসের মধ্যে মাত্র ৮১টি তাদের পাওয়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়েছে — যা ক্যাথলিক চার্চের জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
নতুন পোপ লিওর কঠোর বার্তা
নতুন পোপ লিও, যিনি এই সপ্তাহেই প্রথমবারের মতো নির্যাতনের শিকারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, চার্চের নতুন বিশপদের সতর্ক করে বলেছেন, “যৌন অপরাধ গোপন করা যাবে না।”
তার পূর্বসূরি প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস ১২ বছরের দায়িত্বকালে এ সংকট সমাধানকে অগ্রাধিকার দিলেও, ফলাফল মিশ্র ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রেতে ল’আবুসোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর থেকে সংগৃহীত তথ্যে অন্তত ১,২৫০টি সন্দেহভাজন নির্যাতনের ঘটনা পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১,১০৬টি ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুরোহিতরা। বাকি অভিযোগ এসেছে সন্ন্যাসিনী, ধর্মীয় শিক্ষক, স্কাউট সদস্য ও চার্চের স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪,৬২৫ জন ভুক্তভোগীর মধ্যে ৪,৩৯৫ জনই পুরোহিতদের দ্বারা নির্যাতিত, যাদের মধ্যে ৪,৪৫১ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং ৪,১০৮ জন পুরুষ। এছাড়া ৫ জন সন্ন্যাসিনী, ১৫৬ জন অসহায় প্রাপ্তবয়স্ক ও ১১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ১,১০৬ জন অভিযুক্ত পুরোহিতের মধ্যে মাত্র ৭৬ জনের বিরুদ্ধে চার্চের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যেখানে ১৭ জনকে সাময়িক বরখাস্ত, ৭ জনকে অন্য প্যারিশে বদলি, এবং ১৮ জনকে পুরোহিত পদ থেকে অপসারণ বা পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এছাড়া ৫ জন অভিযুক্ত আত্মহত্যা করেন।
বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চে যৌন কেলেঙ্কারি নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে ইতোমধ্যে এমন হাজারো অভিযোগ উঠেছে। তবে ইতালিতে চার্চ নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে, যা এখন পোপ লিওর নেতৃত্বে নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
