ট্রাম্প-শি’র দক্ষিণ কোরিয়া সফর
আঞ্চলিক কূটনীতিতে নতুন অধ্যায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:২৫, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
ফাইল ছবি
দক্ষিণ কোরিয়ায় আগামী সপ্তাহে একযোগে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দেশটির প্রেসিডেন্ট লি জে ম্যাং পৃথকভাবে দুই নেতার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা উই সঙ-ল্যাক।
‘কোরিয়া হবে আলোচনার মঞ্চ’
উই সঙ-ল্যাক শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন,“দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং নিজস্ব নেতৃত্বের মধ্যে ধারাবাহিক শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে শান্তি, সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ঐকমত্য গড়তে চায়। কোরিয়া এখন শুধু এক দেশ নয়—একটি কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।”
আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) সম্মেলনের আয়োজন করছে। এরই অংশ হিসেবে ট্রাম্প ও শি আলাদা সময়ে সিউলে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।
বাণিজ্য ও শুল্ক: দুই দেশের তিক্ততা এখনো কাটেনি
ওয়াশিংটনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার আলোচনায় শুল্ক ও বিনিয়োগই এখন সবচেয়ে বড় বাধা। দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পমন্ত্রী জানান, মার্কিন শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্যাকেজে যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার অবস্থান “তীব্রভাবে ভিন্ন”।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এই সফরকে “এশিয়া সফরের অংশ” বলে আখ্যা দিয়েছে—যেখানে বাণিজ্য উত্তেজনা নিরসনই অন্যতম উদ্দেশ্য।
শি–লি বৈঠক: উত্তর কোরিয়া ইস্যুতেও নজর
লি জে ম্যাং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়েছে।
চীন এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব পুনরুজ্জীবিত করতে চায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রভাব মোকাবিলায়।
‘সুপার উইক’ অফ সামিটস
দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা উই সঙ-ল্যাক একে আখ্যা দিয়েছেন—“একটি ‘সুপার উইক অফ মাল্টিল্যাটারাল সামিটস’, যেখানে প্রথমে আসিয়ান সম্মেলন এবং এরপর গিয়ংজুতে এপেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।”
লি জে ম্যাং ২৬–২৭ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেবেন, যেখানে ট্রাম্পও উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত-এর সঙ্গেও বৈঠক করবেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনলাইন প্রতারণা ইস্যুতে আলোচনা করবেন।
২০২৫ সালের অক্টোবরের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য সংঘাত, প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা এবং নিরাপত্তা উত্তেজনার মাঝখানে দেশটি নিজেকে “মধ্যস্থ শক্তি” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
এই সফর সফল হলে কোরিয়ার কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পাবে; কিন্তু বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো বড় চুক্তি না হলে সিউলের উপর দ্বৈত চাপ বাড়বে—একদিকে মার্কিন অর্থনৈতিক প্রত্যাশা, অন্যদিকে চীনা রাজনৈতিক প্রভাব।
