আনন্দবাজারের প্রতিবেদন
আ.লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের বৈধতা নেই: জয়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০২:৪৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:৪৩, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
ছবি : ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার
বাংলাদেশে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে আবারও রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। প্রবাসে থাকা আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতারা বলছেন—আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন মানে 'গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো'। এবার সেই সুরেই সুর মেলালেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপিকে (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, “আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনীনভাবে অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু বর্তমানে যা হচ্ছে, তা আসলে আমার মা ও আমাদের দলকে ভোটে অংশ নিতে না দেওয়ার রাজনৈতিক কৌশল।”
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বুধবার এপিকে সাক্ষাৎকারটি দেন জয়। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এপি এবং ভারতের কলকাতার বাংলা সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের আমলে গত মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
জয়ের অভিযোগ, “বিচারের নামে চলছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আওয়ামী লীগকে ভোটে না নামার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতির সুযোগই দেওয়া হয়নি। এখন যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াও হয়, সেই নির্বাচনের কোনো অর্থ থাকবে না।”
জয়ের দাবি, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের সুবিধা দিতে ভোটে কারচুপির পরিকল্পনা করছেন।’ তার ভাষায়, “বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে চরমপন্থার উত্থান ঘটবে, যা দেশের জন্য ভয়াবহ।”
অন্যদিকে, এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার।
শেখ হাসিনার আমলে বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগের প্রশ্নে জয় স্বীকার করেন, “কিছু ভুল হয়েছিল, তবে তা ইচ্ছাকৃত নয়।”
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন। তবে জয় দাবি করেন, “ইউনূস সরকারেরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৮০০-এর মতো। প্রত্যেক মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক, তদন্ত হওয়া উচিত।”
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগও বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন জয়। তিনি বলেন, “ইউনূস সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।”
ভারতও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে ঢাকার পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ আগেও অস্বীকার করা হয়েছে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে মাঠে আছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে ড. ইউনূস সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। জয়ের বক্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হলো—“গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিকল্প নেই।”
সূত্র: এপি ও আনন্দবাজার অনলাইন
