নারীনেত্রী ঘানার সাবেক ফার্স্ট লেডি রলিংস আর নেই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০১:৩৪, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:০৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
ঘানার সাবেক ফার্স্ট লেডি নানা কনাডু আগিমান-রলিংস ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি ছিলেন ঘানার দীর্ঘতম সময়ের ক্ষমতাধর নেতা জেরি জন রলিংসের স্ত্রী, যিনি পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন।রলিংস দুটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পরে গণতান্ত্রিক ভোটে দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক ফার্স্ট লেডি, রাজনীতিবিদ ও নারী অধিকার আন্দোলনের এই অগ্রদূতকে নিয়ে শোক প্রকাশের বন্যা বইছে। ঘানার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ফেলিক্স কওয়াকিয়ে অফুসু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে স্বল্প অসুস্থতার পর নানা কনাডু রলিংসের মৃত্যু হয়।
বিকেলে তার পরিবার প্রেসিডেন্ট জন মাহামাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুর খবরটি জানায়। প্রেসিডেন্ট মাহামা বর্তমানে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস (এনডিসি) দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা জেরি রলিংস ক্ষমতায় এসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আগিমান-রলিংস নিজেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন—তিনি ২০১২ সালে এনডিসির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন পাননি।
ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি ৩১ ডিসেম্বর উইমেন’স মুভমেন্ট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ও সম্প্রদায়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করত। সংগঠনটির নামকরণ করা হয় তার স্বামীর দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের (১৯৮১ সালের ৩১ ডিসেম্বর) তারিখ অনুসারে।
১৯৪৮ সালের নভেম্বরে জন্ম নেওয়া আগিমান-রলিংস কেপ কোস্ট শহরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হন। রাজধানী আক্রার বিখ্যাত আচিমোটা স্কুলে বোর্ডার হিসেবে ভর্তি হওয়ার পর তার সঙ্গে ভবিষ্যৎ স্বামী জেরি রলিংসের পরিচয় হয়।
রলিংস বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৯৭৮ সালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। এক বছর পর তাদের বিয়ে হয়। এর কিছুদিন পরই মাত্র ৩২ বছর বয়সে রলিংস প্রথম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন, এবং বলা হয় তার স্ত্রী ছিলেন তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা।
তরুণ, আকর্ষণীয় ও উদ্যমী এই দম্পতি পশ্চিম আফ্রিকার রাজনীতিতে এক শক্তিশালী ও বিতর্কিত জুটি হিসেবে পরিচিতি পান। তাদের চার সন্তান রয়েছে; বড় মেয়ে ডা. জানেতর আগিমান-রলিংস বর্তমানে এনডিসির সংসদ সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয়।
সাবেক ফার্স্ট লেডির সংগঠনটি প্রথমে এনডিসির একটি অঙ্গসংগঠন হিসেবে দেখা হলেও, তা দেশের অসংখ্য নারীর জীবনে বাস্তব পরিবর্তন এনেছে, বিশেষ করে দরিদ্র এলাকায়।
তার নারীবিষয়ক প্রচারণা জাতীয় নীতিনির্ধারণেও প্রভাব ফেলেছিল। ১৯৮৯ সালে তিনি এমন একটি আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, যা নারী ও শিশুদের উত্তরাধিকার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়।
এছাড়া ১৯৯২ সালের সংবিধানে লিঙ্গসমতার নীতিমালা অন্তর্ভুক্তিতেও তার ভূমিকা ছিল, যার মধ্য দিয়ে ঘানায় বহুদলীয় রাজনীতি ফিরে আসে।
জাতীয় শোক
ঘানার পার্লামেন্ট নানা কনাডু আগিমান-রলিংসের মৃত্যুতে অধিবেশন স্থগিত করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের প্রস্তুতি চলছে এই আইকনিক নারী নেত্রীর স্মরণে, যিনি নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের জন্য সারা জীবন লড়াই করেছেন।
১৯৯৯ সালে জেরি ও নানা রলিংস যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন—যা ঘানা-আমেরিকা সম্পর্কের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে আজও স্মরণীয়।
