জাপানের প্রধানমন্ত্রীর স্বামীর ইয়ামামোতো দখলে রান্নাঘর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৪০, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ও তার স্বামী তাকু ইয়ামামোতো। ছবি: সংগৃহীত
জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির স্বামী তাকু ইয়ামামোতো জানিয়েছেন, তিনি স্ত্রীকে সহায়তা করবেন স্বামী হিসেবে—রান্না করবেন, কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসবেন না।
ফুকুই টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৭৩ বছর বয়সী সাবেক সংসদ সদস্য ইয়ামামোতো বলেন, “পাশ্চাত্যের মতো নয়, জাপানে সঙ্গীর আলোচনার বাইরে থাকা ভালো।”
তিনি এই মন্তব্য করেন মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর), তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরদিন।
ইয়ামামোতো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকাইচি যেন নিজের ভিশন অনুসরণ করতে পারেন, সেটাই সবচেয়ে জরুরি। আমি এমনভাবে শক্ত সমর্থন দিতে চাই যেন আমার উপস্থিতি কোনো বাধা না হয়।”
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সাবেক এই সাংসদ তাকাইচির সঙ্গে ২০০৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু রাজনৈতিক মতভেদের কারণে ২০১৭ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
তবে ২০২১ সালে তারা আবারও বিয়ে করেন—তখন তাকাইচি এলডিপির নেতৃত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এবং সেই প্রচারণায় ইয়ামামোতো তাকে সহায়তা করেন।
তবে একই বছর অনুষ্ঠিত আগাম নির্বাচনে ইয়ামামোতো সংসদীয় আসন হারান।
৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি এলডিপির রক্ষণশীল শাখার প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি নিজ মন্ত্রিসভায় মাত্র দুইজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন—সাতসুকি কাতায়ামা (অর্থমন্ত্রী) এবং কিমি ওনোডা (অর্থনৈতিক নিরাপত্তামন্ত্রী) হিসেবে।
তাকাইচি এখনও উনিশ শতকের আইন পরিবর্তনের বিরোধিতা করেন, যা অনুযায়ী দম্পতিদের একই পদবি ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
এই আইনের কারণে নিজ জীবনে জটিলতাও পোহাতে হয়েছে তাকাইচি দম্পতিকে। প্রথম দাম্পত্য জীবনে তাকাইচি স্বামীর পদবি ব্যবহার করতেন, আর পুনর্বিবাহের পর ইয়ামামোতো নিয়েছেন স্ত্রীর পদবি।
তারা বর্তমানে টোকিওর সংসদ সদস্যদের সরকারি আবাসনে থাকেন। তাকাইচি এখন নিজ হাতে স্বামীর সেবা করেন—ইয়ামামোতো চলতি বছর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২০২৪ সালে তার প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে।
মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে ইয়ামামোতো তাকাইচিকে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “আমার রন্ধনশিল্পীর লাইসেন্স আছে, তাই সারাজীবন তোমাকে সুস্বাদু খাবার খাওয়াবো।”
তাকাইচি একসময় তার ওয়েবসাইটে লিখেছিলেন, “তিনি একটু একঘেয়ে মানুষ ছিলেন, যার সঙ্গে প্রথমে আমি তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না।”
কিন্তু ইয়ামামোতো তাকে বলেন, “তুমি যদি সত্যিই জীবনসঙ্গী খুঁজে থাকো, আমি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালাম—আমি তালাকপ্রাপ্ত।”
২০০৩ সালে সংসদীয় আসন হারালেও তাকাইচি ২০০৫ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন। তখন দু’জনই সংসদ সদস্য ছিলেন।
তাকাইচি রান্নায় পারদর্শী না হওয়ায় ইয়ামামোতোই প্রতিদিন রান্না করতেন। তিনি হাসতে হাসতে বলতেন, “রান্নাঘর আমার এলাকা, তাই অনুগ্রহ করে সেখানে ঢোকো না।”
এইভাবেই জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও তার “স্টেলথ হাসব্যান্ড”—এক জুটি হয়ে নতুন ইতিহাস লিখছেন টোকিওর রাজনৈতিক আঙিনায়।