শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

এক বছর হাতে থাকতেই আলোচনা

জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব কে নির্বাচিত হবেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২০:২০, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০২:১৬, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব কে নির্বাচিত হবেন

 জাতিসংঘ। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সভাপতি যখন যৌথভাবে মনোনয়ন আহ্বান করে চিঠি পাঠাবেন, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। আগামী বছর জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হবেন, যার পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু হবে ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে।

এখানে এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো।

এখনো কোন প্রক্রিয়া শুরু না হলেও বিশ্বব্যাপী আলোচনায় কয়েক জনের নাম ঘুরপাক খাচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে এবার প্রথমবারের মতো কোন নারী মহাসচিব দেখবে কিনা বিশ্ব। এইসব জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সসহ বেশ কয়েকটিতেই এ নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

কখন শুরু হবে প্রক্রিয়াটি?

এই প্রতিযোগিতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে তখন, যখন জাতিসংঘের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ এবং ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদের সভাপতি যৌথভাবে মনোনয়ন আহ্বান করে চিঠি পাঠাবেন।

এই চিঠি চলতি বছরের শেষ নাগাদ পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একজন প্রার্থীকে অবশ্যই জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের দ্বারা মনোনীত হতে হবে।

প্রথাগতভাবে মহাসচিব পদটি অঞ্চলভিত্তিকভাবে ঘুরে আসে। গুতেরেস (যিনি পর্তুগালের নাগরিক) ২০১৬ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন পূর্ব ইউরোপের পালা ছিল। এবার ধারাবাহিকতায় লাতিন আমেরিকার পালা হলেও কূটনীতিকরা মনে করছেন, অন্য অঞ্চল থেকেও প্রার্থী উঠতে পারেন।

কারা চান জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব হতে?

যদিও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানোর আগে প্রতিযোগিতা শুরু হয় না, তবুও ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রকাশ্যে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

মিশেল ব্যাচেলেট

চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিক ২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেন যে দেশটি সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেটকে মনোনীত করবে।

ব্যাচেলেট ছিলেন চিলির প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং তিনি দুই দফায় প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

তিনি ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এবং ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের নারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।

রেবেকা গ্রিনস্প্যান

কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো চাভেস ৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ঘোষণা করেন যে দেশটি সাবেক উপ-প্রেসিডেন্ট রেবেকা গ্রিনস্প্যানকে মনোনীত করবে।

৬৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ বর্তমানে জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের (আঙ্কটাড) মহাসচিব।

রাফায়েল গ্রোসি

আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞ কূটনীতিক রাফায়েল গ্রোসি দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব পদে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ২০২৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।”

তিনি ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ)-এর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কীভাবে নির্বাচন হবে?

জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ একজন প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে সুপারিশ করবে, যাতে আগামী বছর জাতিসংঘের ১০ম মহাসচিব নির্বাচিত হন।

নিরাপত্তা পরিষদ গোপন ব্যালটে ভোট দেবে—যাকে বলা হয় স্ট্র পোল (straw poll)—যতক্ষণ না একজন প্রার্থী নির্ধারিত হয়।

প্রতিটি প্রার্থীর জন্য সদস্যদের ভোটের বিকল্প থাকে: উৎসাহিত করুন (encourage), নিরুৎসাহিত করুন (discourage) বা মতামত নেই (no opinion)।

শেষ পর্যন্ত স্থায়ী পাঁচ সদস্য—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, চীন ও ফ্রান্স—এর সম্মতি প্রয়োজন। তাদের ব্যালটগুলো সাধারণত অন্য রঙের হয়, যাতে বোঝা যায় কোনো ভেটো-ধারী দেশ আপত্তি জানিয়েছে কি-না।

২০১৬ সালে গুতেরেস নির্বাচিত হতে ছয় দফা স্ট্র পোল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এরপর নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব (সাধারণত গোপন বৈঠকে) গ্রহণ করে, যেখানে নির্বাচিত প্রার্থীকে সাধারণ পরিষদের কাছে সুপারিশ করা হয়। এই প্রস্তাব পাস করতে ৯টি ভোট এবং কোনো ভেটো না থাকা বাধ্যতামূলক।

সাধারণ পরিষদ ঐতিহাসিকভাবে এই অনুমোদন প্রক্রিয়াটিকে আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই দেখে—অর্থাৎ প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছ?

জাতিসংঘ এর ঐতিহ্যগতভাবে গোপন এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করার চেষ্টা করছে।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ পরিষদে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়নের সময় একটি ভিশন স্টেটমেন্ট দিতে হবে এবং সেটি প্রকাশ্যভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ দিতে হবে।

এই বিবৃতিগুলো জাতিসংঘের একটি বিশেষ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া প্রতিটি প্রার্থীকে তাদের অর্থায়নের উৎস প্রকাশ করতে হবে।

যেসব প্রার্থী বর্তমানে জাতিসংঘের কোনো পদে আছেন, তাদের বলা হয়েছে “প্রচারের সময় তাদের কাজ স্থগিত রাখার কথা বিবেচনা করতে,” যাতে স্বার্থের সংঘাত বা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা গ্রহণের আশঙ্কা না থাকে।

মহাসচিবের ভূমিকা কী?

জাতিসংঘ সনদে মহাসচিবকে বলা হয়েছে “বিশ্ব সংস্থার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা”।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে পদটি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে: “অংশত কূটনীতিক ও সমর্থক, অংশত সরকারি কর্মচারী ও নির্বাহী প্রধান।”

বর্তমানে গুতেরেস ৩০,০০০-এর বেশি বেসামরিক কর্মী এবং প্রায় ৬০,০০০ সেনা ও পুলিশসহ ১১টি শান্তিরক্ষা মিশন তদারকি করছেন।

জাতিসংঘের মূল বার্ষিক বাজেট ৩.৭ বিলিয়ন বা ৩৭০ কোটি ডলার, আর শান্তিরক্ষা বাজেট ৫.৬ বিলিয়ন বা ৫৬০ কোটি ডলার।

যেহেতু সামরিক পদক্ষেপ বা নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা নিরাপত্তা পরিষদের হাতে, তাই মহাসচিবের ভূমিকা মূলত নৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবের।

অনেক কূটনীতিক বলেন, পাঁচ স্থায়ী সদস্য চান মহাসচিব হোন “secretary”, খুব বেশি “general” না।

কোনো নারী কি কখনো মহাসচিব হয়েছেন?

না। জাতিসংঘের ৮০ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী এখনো মহাসচিব হননি। এই কারণে নারী প্রার্থী বেছে নেওয়ার জন্য চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদ “দুঃখ প্রকাশ করেছে যে এখনো কোনো নারী মহাসচিব পদে আসীন হননি”, এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে “নারী প্রার্থীদের দৃঢ়ভাবে বিবেচনা করতে।”

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন