ভবানীপুর-মধ্যপাড়া রেলপথে চুরির মচ্ছব
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:৫২, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০২:১৩, ১ নভেম্বর ২০২৫
 
						
									দিনাজপুরের পার্বতীপুরে দেশের একমাত্র কঠিন শিলা প্রকল্প মধ্যপাড়া পাথর খনি-সংলগ্ন রেলপথে ঘটেছে অবিশ্বাস্য চুরির ঘটনা। ভবানীপুর-মধ্যপাড়া ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনের প্রায় ৬ হাজার নাটবল্টু ও ফিসপ্লেট খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। মাত্র দু’দিনে প্রায় ৬৩ লাখ টাকার বেশি রেল সম্পদ লোপাট হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবানীপুর স্টেশন থেকে পান্তাপাড়া-কালিকাপুর পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার জুড়ে ২ হাজার ফিসপ্লেট ও ৪ হাজার ফিসবোল্টের কোনো অস্তিত্ব নেই। রেলপথের স্লিপার ও পাটাতনও ভাঙা বা অনুপস্থিত। স্থানীয়রা জানায়, দিনের বেলাতেই দুর্বৃত্তরা নাটবল্টু খুলে নিচ্ছে, অথচ কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই বললেই চলে।
মৌলভী ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার হাবিব বলেন, ‘রেলপথটি সচল থাকলে এমন চুরি ঘটত না। সড়কপথে পার্বতীপুরে যেতে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়, অথচ রেলপথ সচল থাকলে সময় ও খরচ দুটোই কম লাগত।’
রেলের পার্বতীপুরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) আবু জাফর মো. রাকিব হাসান বলেন, ‘রেলওয়ের মহাপরিচালক এক মাস আগে রেলপথটি পরিদর্শন করেছেন। সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এখন থেকে দিনে ওয়েম্যান মোতায়েন করা হবে যাতে চুরির ঘটনা রোধ করা যায়।’
তবে খনি ও রেল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে ৭১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেললাইন নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০৯ সালে শেষ হয়। কিন্তু ২০১১ সালে ৭০টি স্লিপার চুরি যাওয়ার পর থেকেই পাথর পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে রেলপথটি কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
পার্বতীপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী/পথ (পিবউআই) মো. শেখ আল আমিন বলেন, ‘নিজস্ব জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও প্রতিরাতে ১৩-১৪ ওয়েম্যান দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে।’
ওয়েম্যানরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তারা প্রতিরাতে পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু টিএ বিল (ভ্রমণ ভাতা) ২০২৪ সালের জুন থেকে বকেয়া রয়েছে। ১২টি টর্চলাইট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা নিজেদের অর্থে টর্চ কিনে পাহারা দিচ্ছেন। স্থানীয় চোরচক্রের হুমকি ও ইটপাটকেল ছোড়ার মাঝেও তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘প্রতিরাতে ওয়েম্যান পাহারা থাকলেও দিনে চুরি হচ্ছে। এখন থেকে দিনে পাহারার ব্যবস্থা করা হবে।’
অন্যদিকে, মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ডিএম জোবায়েদ হোসেন বলেন, ‘রেলপথ সচল না থাকায় সড়কপথে পাথর পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে পাথরের দামও প্রভাবিত হচ্ছে।’
রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিমাঞ্চল) মো. আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, ‘মধ্যপাড়া পাথর খনি আবার রেলপথে পাথর পরিবহনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ও এই রেলপথ সংস্কারে আগ্রহী।’
পার্বতীপুর রেলওয়ে থানার ওসি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাছাড়া রেলপথটি পরিত্যক্ত হওয়ায় এটা রেল থানার আওতায় পড়ে না।’

 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													