শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

| ১৬ কার্তিক ১৪৩২

সঞ্চয়পত্র জালিয়াতিতে সাবেক ছাত্রদল নেতার নাম, চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচন

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯:১৬, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

সঞ্চয়পত্র জালিয়াতিতে সাবেক ছাত্রদল নেতার নাম, চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচন

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ই-সিস্টেমে অননুমোদিত প্রবেশ করে সঞ্চয়পত্রের তথ্য পরিবর্তন করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও স্থানান্তরের অভিযোগে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলা দায়ের করেছেন ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ। মামলার এজাহারে ছাত্রদলের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোহাম্মদ মারুফ এলাহী রনিসহ মহিউদ্দিন আহমেদ, মো. আরিফুর রহমান এবং আল আমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণনায় বলা হয়েছে, মহা-হিসাব নিরীক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা এস এম রেজভীরের নামে থাকা একটি সঞ্চয়পত্র থেকে ২৫ লাখ টাকা অননুমোদিতভাবে উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়েছিলো। প্রথমবার এই প্রচেষ্টা ধরা পড়ে ১৩ অক্টোবর ২০২৫-এ। এরপর ২৩ অক্টোবর ২০২৫-এ জালিয়াতির মাধ্যমে ওই অর্থ সিস্টেমের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়। একই কৌশলে আরও দুটি আলাদা সঞ্চয়পত্রে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মোট ৭৫ লাখ টাকার লেনদেনের চেষ্টা চালানো হয়েছিলো। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ৫০ লাখ টাকা শনাক্ত ও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকিটা আটকে দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মো. আরিফুর রহমানকে মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি তিন আসামির সন্ধান ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে চক্রটি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সার্ভারে অবৈধভাবে প্রবেশ করে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর, যাচাইকরণ তথ্য ও সঞ্চয়পত্রের রেকর্ড পরিবর্তন করেছিল। ওটিপি-ভিত্তিক নিরাপত্তা সিস্টেম এড়িয়ে ভুয়া ট্রান্সফার ঘটিয়ে দ্রুত অন্য ব্যাংক-হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট শাখার নজরপানির কারণে কিছু লেনদেন আটকানো হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকাও যাচাই করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ মারুফ এলাহী রনি ছাত্রদলের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত মহিউদ্দিন আহমেদ, মো. আরিফুর রহমান ও আল আমিনও চক্রটিতে সক্রিয় ছিলেন। ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব জানিয়েছে, অভিযুক্তরা বর্তমানে সংগঠনের কোনো পদে নেই এবং ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য সংগঠন দায়ী নয়; তবে ঘটনার কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তদন্তের প্রক্রিয়া এখনো চলছে। পুলিশ ও সাইবার ইউনিট যৌথভাবে ডিজিটাল ফরেনসিক যাচাই করছে, ব্যাংক হিসাবের ট্রানজেকশন-ট্রেইল সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ব্যবহারকৃত ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। তদন্তে আরও গ্রেপ্তার এবং আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সিস্টেম নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে। তারা বলেছে, ডিজিটাল সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থায় বহুপদক্ষেপমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত নিরাপত্তা অডিট কার্যকর করা হবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মীদের সচেতনতা নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতির সম্ভাবনা থাকে।

উপসংহারে, মামলাটি রাষ্ট্রীয় সঞ্চয় ব্যবস্থার সাইবার নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তিগত দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অননুমোদিত প্রবেশ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এই ঘটনায় দেশের সরকারি সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন