শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

| ১৬ কার্তিক ১৪৩২

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণ ভোট করার চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:৩২, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণ ভোট করার চিন্তা

জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে আয়োজনের চিন্তা করছে সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্যের কারণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, গণভোটসহ এই সংস্কার প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার ইতিমধ্যেই তৎপর। এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী নির্বাচনের দিন গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোটের আয়োজনের আলোচনা উঠে আসে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত উপদেষ্টাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। উপস্থিত উপদেষ্টাদের একটি বড় অংশ একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেননি; তিনি উপদেষ্টাদের মতামত শুনেছেন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের আলোচনায় একসঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের সুবিধা ও ঝুঁকি উভয়ই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। উপদেষ্টারা মনে করছেন, একসাথে ভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক ব্যয় কমবে, ভোটাররা একবারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অংশ নিতে পারবেন এবং সময়ের সাশ্রয় হবে। তবে একসঙ্গে ভোট আয়োজনের সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। যেমন, ভোটারদের বিভ্রান্তি, প্রশাসনিক জটিলতা, নির্বাচনের স্বচ্ছতা বজায় রাখা কঠিন হওয়া এবং আইনগত ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা।

রাজনৈতিক দলগুলোও বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। সরকারি সূত্র বলছে, কিছু দল মনে করছে একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে সময় ও খরচ কমবে এবং ভোটারদের জন্য সুবিধা থাকবে। অন্যদিকে, কিছু বিরোধীদল মনে করছে, নির্বাচন ও গণভোট আলাদাভাবে হলে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা সহজ হবে। এই মতপার্থক্যের কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে।

সরকার ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন, আইন বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ শুরু করেছে। প্রশাসন সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এক বড় পরীক্ষা হবে। ভোটারদের সচেতনভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।

সরকার সূত্র জানিয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের মতামত শোনার পর এখন বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রশাসনিক সক্ষমতা, আইনগত কাঠামো এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বলা যায়, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোটের পরিকল্পনা দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সরকারের লক্ষ্য হলো দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, যাতে নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং গণভোটের কার্যকারিতা দুটোই নিশ্চিত থাকে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন