বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

| ১৪ কার্তিক ১৪৩২

 ‘অবৈধ সম্পদ জব্দের’ অভিযোগ 

বিশ্বব্যাংকে সালিশি মামলা করলেন এস আলম 

সমাজকাল ডেস্ক 

প্রকাশ: ১৮:০৩, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বব্যাংকে সালিশি মামলা করলেন এস আলম 

দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম (এস আলম) এবং তার পরিবার বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্রে (আইসিএসআইডি) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সালিশি মামলা করেছে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (২৭ অক্টোবর) ওয়াশিংটনে অবস্থিত আইসিএসআইডি-তে এই মামলা দায়ের করা হয়। এতে এস আলম পরিবার অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং মিথ্যা তদন্তের মাধ্যমে ‘রাজনৈতিকভাবে টার্গেট’ করছে।

মামলায় এস আলম পরিবার দাবি করেছে, সরকারের পদক্ষেপে তাদের শত শত কোটি ডলারের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, ‘অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করছে— ব্যাংক জব্দ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত, এমনকি প্ররোচনামূলক গণমাধ্যম অভিযান চালানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘যখনই আবেদন হাতে আসবে, আমরা যথাযথভাবে উত্তর দেব।’

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এখনো এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

এই সালিশি মামলা করা হয়েছে বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ২০০৪-এর আওতায়।

জানা গেছে, এস আলম পরিবার বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছে এবং ২০২১–২০২৩ সালের মধ্যে তারা সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। তাদের দাবি, ‘সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে আমাদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যার একটি বড় অংশের সঙ্গে এস আলম গ্রুপের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এস আলম পরিবার বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। তারা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় একাধিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এবং আমদানি-ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত ছিল।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। এখন আমরা তাদের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনে কাজ করছি।’

বিশ্লেষকদের মতে, এই সালিশি মামলা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, সরকার সম্প্রতি দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে জোরদার উদ্যোগ নিয়েছে। যদি বিশ্বব্যাংকের সালিশি বোর্ড এস আলম পরিবারের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং খাতে আন্তর্জাতিক আস্থার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে সম্পদ জব্দ, তদন্ত ও ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেয় সরকার। গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম পরিবার সরকারের কাছে সতর্কবার্তা দিয়েছিল— ছয় মাসের মধ্যে সমাধান না হলে তারা আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনালে যাবে। অবশেষে সেই পথেই তারা এগোল।

সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন