নাসীরুদ্দীনকে ‘পাগলের প্রলাপ’ পড়াতে নিষেধ করলেন রাশেদ খান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:৪৪, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ইসলাম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এমন মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ওই মন্তব্যকে শুধু ‘পাগলের প্রলাপ’ ও ‘উদ্ভট বক্তব্য’ বলেই ক্ষান্ত হননি; তিনি এনসিপি নেতার মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তুলে আনলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কিভাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলো ও এসবে আসিফ নজরুলের ভূমিকা কি ছিল- তাও।
এমনকি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এমন মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে রাশেদ খান এমনও জানান- ‘হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকা সময়েই নাহিদ ইসলামরা সরকার গঠনের ছক তৈরি করে ফেলেন’।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল চারটার দিকে রাশেদ খান তার ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর উদ্দেশে এসব কথা লিখেছেন। সেই স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়।
সমাজকালের পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“ডক্টর আসিফ নজরুল কার কাছে প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন? অথচ ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে বহাল রেখে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন নাহিদ ইসলাম। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো আছে। এছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ইং তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সাক্ষী দিতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন। ৪ আগস্ট তাঁকে নতুন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেন তারা’।”'
“অর্থাৎ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকা সময়েই নাহিদ ইসলামরা সরকার গঠনের ছক তৈরি করে ফেলেন। যদিও এসব নিয়ে বেশ অস্পষ্টতা আছে।”
“তবুও আমার প্রশ্ন হলো, তখন কি আসিফ নজরুল স্যার এটি জানতে পেরে নাহিদ ইসলামকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা না করে তাকে করা হোক? এধরনের কোন বক্তব্য নাহিদ ইসলাম কোনদিন দেননি, গনঅভ্যূত্থানের ইতিহাস নিয়ে আসিফ মাহমুদ বই লিখেছেন সেখানেও এমন কিছু বলা নেই। এনসিপির নাসীরউদ্দিন তাহলে এতোদিন পর এমন উদ্ভট দাবি তুললেন কেন? কোন অসৎ উদ্দেশ্যে তার উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য?”
“গতবছর ৫ আগস্ট দুপুরবেলা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কল করা হয় আসিফ নজরুল স্যারকে। তাকে বলা হয়, সেনাবাহিনী এই রক্তপাত ও হত্যা বন্ধ চায়। তাকে ছাত্রদের সাথে কথা বলার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। তখন আসিফ নজরুল স্যার অনেকের পরামর্শে রক্তপাত ও গণহত্যা বন্ধে মধ্যস্থতা করার উদ্যোগ নেন। সেসময় প্রতিটা টেলিভিশনে সংবাদ ভেসে ওঠে, আসিফ নজরুলের সাথে সেনাপ্রধানের বৈঠক, জরুরি ভাষণ দিবেন সেনাপ্রধান। সেসময় চারিদিকে বাধভাঙ্গা আনন্দ। হাসিনা ইতোমধ্যে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা ছেড়েছে।”
“সেনাপ্রধান ও আসিফ নজরুল স্যারের সমালোচনা থাকবে, থাকাও স্বাভাবিক। দায়িত্বে থাকলে সমালোচনা কার না হয়? কিন্তু সেদিন রক্তপাত ও হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগকে কোনভাবেই নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই। আরও কয়েকহাজার মানুষ মারা গেলে কি খুব ভাল হতো? এখন অনেকে অনেক পন্ডিতি কথাবার্তা বলবে। কিন্তু তারা কি আরও রক্ত চেয়েছিলো বা বিপ্লব করতে অস্ত্র হাতে মাঠে নেমেছিলো?”
“যাইহোক, এনসিপি আইন উপদেষ্টাকে গণঅধিকার পরিষদের প্রতি বায়াসড বলে, তার সম্পর্কে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে। হ্যা, আইন উপদেষ্টার সাথে আমার ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জেল থেকে জামিন পাওয়ার পর থেকে সম্পর্ক।”
“মূলত আমার মুক্তির জন্য তিনি আমার মা-বাবার সাথে রাজপথে নেমেছিলেন, ছাত্রলীগের দ্বারা অপদস্ত হয়েছিলেন। তিনি নুরুল হক নুর, হাসান মামুন ও আমাদের তখনকার ছাত্র সংগঠনের নেতা আখতারের পক্ষেও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এমনকি নাহিদ আসিফসহ ৬ সমন্বয়ক পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাদের মুক্তির জন্য তিনিই সংবাদ সম্মেলন করেন, রাজপথে নামেন।”
“প্রতিটা আন্দোলন এবং ছাত্রদের আন্দোলনে আসিফ নজরুল একজন যোগ্য অভিভাবক হিসেবে পাশে ছিলেন। আসিফ নজরুল স্যারের ভুল থাকলে সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন এমন পাগলের প্রলাপ পাড়িয়েন না।”
