রয়টার্সকে শেখ হাসিনা
আ.লীগ অংশ নিতে না পারলে সমর্থকরা ভোট বয়কট করবে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:২৭, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২১:০৫, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারলে তার দলের লাখ লাখ সমর্থক আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বয়কট করবে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে আয়োজিত নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সরকার গঠিত হয়, আমি দেশে ফিরব না। ভারতেই থাকব।”
তিনি যোগ করেন, “পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনী বৈধতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কেবল নীতিবিরুদ্ধ নয়, আত্মবিধ্বংসীও বটে। লাখ লাখ সমর্থক ভোট না দিলে একটি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা। দিল্লিতে অবস্থানকালীন এটি তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার। রয়টার্স ছাড়াও এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়েছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।
গত মে মাসে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। এর আগে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশে ১২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, স্বচ্ছ নির্বাচনে বিএনপি ভূমিধস জয় পেতে পারে, কারণ আওয়ামী লীগ এখন (কার্যক্রম) নিষিদ্ধ অবস্থায়।
“আমরা আমাদের সমর্থকদের অন্য দলকে ভোট দিতে বলছি না,” বলেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, “আমাদের আশা, কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারব।” তবে কোনও পক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
দেশে ফেরার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “যদি বৈধ সরকার থাকে, সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষিত হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে, আমি অবশ্যই দেশে ফিরতে চাইব।”
মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, ও ভিন্নমত দমনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর এসব অভিযোগ আরও তীব্র হয়।
জুলাই-আগস্ট মাসের সহিংসতায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন। সেই সময়ের ঘটনাগুলো নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে, যার রায় ১৩ নভেম্বর ঘোষিত হতে পারে।
শেখ হাসিনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “ওগুলো সব রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসন। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি।”
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা আমার বা আমার পরিবারের বিষয় নয়। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ। সংবিধান ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এখন জরুরি।”
তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে তার পরিবারের সরাসরি সম্পৃক্ততা নাও থাকতে পারে—যদিও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আগেই বলেছিলেন, দল চাইলে তিনি নেতৃত্বের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে দিল্লির লোধি গার্ডেনে শেখ হাসিনাকে দেখা যায়। কয়েকজন পথচারী চিনে ফেললে তিনি মৃদু হাসিমুখে মাথা নাড়েন। তার সঙ্গে দুজন নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ দিন, যখন তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় কেবল তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান।
শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দাবি করছে, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে।
