আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় প্রশ্ন তুলল এমএসএফ
অজ্ঞাতনামা লাশ ও হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:৩৩, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
 
						
									মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা এবং কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা আগের মাসের তুলনায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, এই বৃদ্ধি জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নাগরিক সমাজে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার বেড়েছেপ্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অক্টোবর মাসে দেশে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে—যেখানে সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫২। এমএসএফ বলছে, লাশগুলো প্রধানত নদী, খাল, সেতুর নিচে, রেললাইন সংলগ্ন এলাকা, পরিত্যক্ত ভবন ও ফসলি জমিতে পাওয়া গেছে।
কিছু লাশ গলাকাটা, বস্তাবন্দী কিংবা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়, যা হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত দেয়।
লাশগুলোর মধ্যে রয়েছেন ১ শিশু, ১ কিশোর, ১১ নারী ও ৫৩ পুরুষ। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০–৩০ বছর বয়সী পুরুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—১৫ জন। এ ছাড়া ৩১–৪০ বছর বয়সী ২৫ জন, ৪১–৫০ বছর বয়সী ৬ জন এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী ১২ জনের লাশ পাওয়া গেছে।
এমএসএফ মন্তব্য করেছে, ‘শুধু লাশ উদ্ধার করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না; পরিচয় শনাক্ত করে হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।’
অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরের ৮ জনের তুলনায় অনেক বেশি। মৃতদের মধ্যে ৬ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতি ছিলেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬ জন, গাজীপুরের কাশিমপুরে ১ জন, শেরপুরে ১ জন, আর খুলনা, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ কারাগারে একজন করে বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।
সব মৃত্যুই কারাগারের বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটে।
এ প্রসঙ্গে এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার এবং হেফাজতে মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান হার মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি নির্দেশ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাশ উদ্ধার করলেও পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে গাফিলতি করছে।’
এমএসএফের তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ২ জন নিহত ও ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৪ জন গুলিবিদ্ধ।
একই সময়ে গণপিটুনির ৪৪টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়, যেখানে ১২ জন নিহত হয়েছেন। যদিও সেপ্টেম্বর মাসে নিহতের সংখ্যা ছিল ২৪ জন, সহিংসতার সামগ্রিক চিত্র এখনো উদ্বেগজনক।
প্রতিবেদনটি উপসংহারে বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ ও হেফাজতে মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনআস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমএসএফ মনে করে, তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবই এই সন্দেহের মূল কারণ।
 

 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													