জলবায়ু পরিবর্তনে সভ্যতার অবসান হবে না: বিল গেটস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:৫৩, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:২৮, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
বিল গেটস। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বখ্যাত সমাজসেবী ও মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কেবল তাপমাত্রা কমানো নয়, বরং মানুষের জীবনমান উন্নয়নই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। এ প্রেক্ষাপটে তিনি তিনটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন, তার সর্বশেষ প্রবন্ধ ‘অ্যা নিউ ওয়ে টু লুক অ্যাট দ্য প্রবলেম’-এ।
১. জলবায়ু পরিবর্তনে সভ্যতার শেষ নয়
গেটস তার সর্বশেষ প্রবন্ধে লিখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিঃসন্দেহে গুরুতর বিষয়, তবে এটি মানব সভ্যতার সমাপ্তি ডেকে আনবে না। তিনি বলেন, ‘মানবতার ভবিষ্যৎ এখনো বিজ্ঞানের ও উদ্ভাবনের হাতেই নিরাপদ।’
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন—পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিলেও ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব সময়ের তুলনায় ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে, যা প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
তবে আগামী দশকের মধ্যেই শূন্য-কার্বন প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গেটস। এতে জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি রোধ সম্ভব হবে।
২. মানুষ হতে হবে উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু
বিল গেটস মনে করেন, জলবায়ু লড়াইয়ের সাফল্য কেবল কার্বন নিঃসরণ কমানো বা গড় তাপমাত্রা কমানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—বরং তা মাপা উচিত মানুষের জীবনের মানোন্নয়নের ভিত্তিতে, বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের তাপমাত্রা আমাদের বলে না, মানুষ কত ভালো আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা এখনো দারিদ্র্য ও রোগব্যাধি।’
নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘ব্রেকথ্রু এনার্জি’ সংস্থার মাধ্যমে বিল গেটস ইতিমধ্যে ১৫০টিরও বেশি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন, যারা কাজ করছে নিম্ন-কার্বন সিমেন্ট ও ইস্পাত, উন্নত ভূতাপীয় শক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়নে।
৩. সমৃদ্ধিই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সেরা প্রতিরক্ষা
গেটস সতর্ক করে বলেছেন, কেবল প্রযুক্তিই যথেষ্ট নয় — নীতিনির্ধারণে মানবিক দিককেও গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, অনেক সময় ‘পরিবেশবান্ধব’ নীতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষতি ডেকে আনে; যেমন সার নিষিদ্ধকরণের কারণে কিছু দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল।
তার মতে, শক্তি, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করাই জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধিই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা।’
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইমেট ইমপেক্ট ল্যাবের গবেষণা উদ্ধৃত করে গেটস জানান, নিম্নআয়ের দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শতাব্দীর শেষে জলবায়ু-সম্পর্কিত মৃত্যুহার ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে যেতে পারে। যখন মানুষ স্বাস্থ্যবান ও সচ্ছল হয়, তখন তারা বন্যা, খরা ও তাপপ্রবাহের মতো দুর্যোগ টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করে।
বৈশ্বিক জলবায়ু এজেন্ডায় দুটি অগ্রাধিকার
বিল গেটস বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য দুটি মূল অগ্রাধিকারের কথা বলেছেন—
১. গ্রিন প্রিমিয়াম শূন্যে নামিয়ে আনা— অর্থাৎ, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির খরচ যেন জীবাশ্ম জ্বালানির সমান বা কম হয়।
২. মানুষকেন্দ্রিক ফলাফল মূল্যায়ন—সীমিত সম্পদ যেন ব্যয় হয় এমন প্রকল্পে, যা মানুষের জীবন বাঁচায় বা উন্নত করে। যেমন: টিকা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ বা কৃষি উদ্ভাবন।
শেষে গেটস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অর্থ হলো—মানবতার অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া নয়, বরং উন্নয়ন ও সহমর্মিতার পথ ধরে টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।’
সূত্র : খালিজ টাইমস
