জুলাই সনদে বিএনপি অসন্তুষ্ট, সুপারিশে আক্ষেপ
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:০৬, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:০৮, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন। খসড়ায় বেশ কিছু ধারা–প্রস্তাব রয়েছে, যা দলটির মতে‑ আলোচনা ও পারস্পরিক সমঝোতার বাইরে গড়ে উঠেছে। ফলে তারা চাচ্ছে—এই বিষয়গুলো সংশোধন হলে তাঁদের চূড়ান্ত মতামত দেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খসড়ায় এমন একটা অংশ রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে সংসদ সদস্যরাই একটি 'সংবিধান সংস্কার পরিষদ' হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলছেন—'জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই সংবিধান সংশোধনের কাজ নিতে পারবে'‑এ ধরনের ধারণা এখনও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বা আলোচনায় স্পষ্টভাবে নেওয়া হয়নি।
বিএনপি'র আরেক নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের মূল অবস্থান হলো—গণভোট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসাথে অনুষ্ঠিত হোক। দুইভাবেই ভাগ করা বা ভিন্ন সময়ে আয়োজন হলে জনগণের অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্যতা কমতে পারে। তিনি বলেন, 'গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হবে—এটা আলাপ-আলোচনায় ছিল এবং আমাদের মূল্যায়ন সেই ভাবেই।'
বিএনপির উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে—প্রকাশিত খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে যে সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি প্রস্তাব কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভিন্নমতের (নোট অব ডিসেন্ট) বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। সালাহউদ্দিন বলেন, 'কয়েকটি ধারা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে গণমাধ্যম বা দলগুলোর ভিন্নমত জায়গা পায় নি। এটি দীর্ঘমেয়াদে বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।'
আইনি পর্যালোচনায় বিএনপি বলছে—যেসব ধারা সংবিধান বা আইন পরিবর্তন করবে, সেগুলি শুধু এক পক্ষের দ্বারা গঠিত সিদ্ধান্তে নয়, সংসদীয় প্রক্রিয়া ও সর্বাঙ্গীন আলোচনার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। সালাহউদ্দিন বলেন, 'সংবিধান সংশোধনের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তার জন্য জনগণের প্রতিনিধির নির্বাচিত সংসদের স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। খসড়ায় সেটি স্পষ্ট নয়।'
উল্লেখ্য, খসড়া সুপারিশ অনুযায়ী—গণভোট অনুষ্ঠিত হবে 'জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ' ও তার তফসিলে থাকা সংশোধন প্রস্তাবগুলোর প্রতি জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে মত প্রকাশ করবে। এরপর, পাস হলে আগামী সংসদকে ২৭০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধন বাস্তবায়নের পুরোদমে কাজ করতে হবে। তবে বিএনপি বলেছে—এই প্রক্রিয়ায় সময়সূচি, প্রশ্নবোধ ও আইনগত কাঠামো পরিষ্কার না হলে তারা অংশ নেবে না।
বৈঠক ও আলোচনায় বিএনপি জানিয়েছে—জুলাই সনদ নিয়ে তারা অধীর আগ্রহে রয়েছে তবে 'কন্ডিশনাল' অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষ সমর্থন দেবে। সালাহউদ্দিন বলেন, 'আমরা এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে পারি, তবে সেটি সর্বদলীয় সংলাপ, স্বচ্ছতা ও আইনগত ভিত্তিতে হবে।'
জুলাই সনদ কার্যকর হলে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সংবিধানিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নতুন অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। তবে বিএনপি‑সহ কয়েকটি রাজনৈতিক পক্ষ বলছে—কেবল সনদ নয়, তার বাস্তবায়নের পদ্ধতি, গণভোটের সময়, সংশোধনের সূত্র ও অংশগ্রহণ এসবই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যদি এসব প্রশ্ন ক্লিয়ার না হয়, তাহলে সনদ বাস্তবায়নের পথে নতুন বিতর্ক বা রাজনৈতিক বিভাজন দেখা দিতে পারে।
