‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে’ ৬ ধাপের রূপরেখা ঘোষণা
গণভোট আগে আয়োজনের দাবি এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৫২, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ছয় ধাপের বিস্তারিত রূপরেখা ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাতে আবারও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে।
দলটি দাবি করেছে, অভ্যুত্থানের দাবি অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের গণভোট আগে হলে পরবর্তী নির্বাচনেই সনদের মূল সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এনসিপি এই রূপরেখা উপস্থাপন করে। বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। সভায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, সারোয়ার তুষারসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুরে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
গোলটেবিল বৈঠকে জহিরুল ইসলাম মুসা লিখিত বক্তব্যে বলেন, `ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে গৃহীত জুলাই সনদের সংস্কার বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটবে। সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদি ক্ষমতা কাঠামো থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথ তৈরি হবে।‘
ছয় ধাপের রূপরেখা
১. প্রধান উপদেষ্টার ‘অর্ডার’ জারি: জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বৈধ উৎস ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ নামে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করবেন। এনসিপি বলছে, এই আদেশই হবে সনদ বাস্তবায়নের একমাত্র আইনগত ভিত্তি।
২. গণভোটের মাধ্যমে ‘কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার’ প্রদান: গণভোটের মাধ্যমে জনগণ পরবর্তী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা (কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার) প্রদান করবে। গণভোটে শুধুমাত্র এই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নই থাকবে।
৩. গণভোট আয়োজনের রূপরেখা আদেশে উল্লেখ: গণভোট আয়োজনের বিস্তারিত পদ্ধতি আদেশের মধ্যেই নির্ধারিত থাকবে। কোনো অধ্যাদেশের মাধ্যমে নয়— কেবল আদেশের বলেই এটি কার্যকর হবে।
৪. নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়ন: বাস্তবায়ন আদেশের অধীনে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় বিধি বা প্রবিধান তৈরি করে গণভোটের আয়োজনের বিস্তারিত প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে।
৫. নতুন সংবিধানের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, ২০২৬’: জুলাই সনদের সংস্কার বাস্তবায়িত হলে নতুন সংবিধান ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, ২০২৬’ নামে অভিহিত হবে। এতে সাংবিধানিক পদের জন্য নতুন শপথের বিধান থাকবে।
৬. জনমত গ্রহণের বাধ্যবাধকতা: এনসিপি বলছে, আদেশ জারির আগে খসড়া জনগণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। জনমত ব্যতীত ‘অগোচরে’ আদেশ চূড়ান্ত করা যাবে না।
সুনির্দিষ্ট রুপরেখার বাইরে আরও কিছু দাবি জানায় এনসিপি:
‘এক্সটা-কনস্টিটিউশনাল’ বাস্তবায়ন দাবি: দলটি বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর বাইরে (‘এক্সটা-কনস্টিটিউশনাল’) হলেও তা বৈধ, কারণ গণঅভ্যুত্থান নিজেই আইনগত কর্তৃত্বসম্পন্ন।
তাদের ভাষায়—`পুরোনো সংবিধানের সীমাবদ্ধ কাঠামো বা আদালতের নজির থেকে এই বৈধতা খোঁজার প্রয়োজন নেই; গণঅভ্যুত্থানই হলো বৈধ উৎস।‘
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে সাদৃশ্য: এনসিপির এই রূপরেখা প্রকাশের কিছুক্ষণ আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারির সুপারিশ করে। সেখানেও অনুরুপ সুপারিশ করেছে কমিশন।
গণভোটে এক প্রশ্নই থাকবে: জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, `গণভোটে একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে— সেটি হলো জুলাই সনদের সংস্কার বাস্তবায়ন ও পরবর্তী সংসদকে কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার ডেলিগেট করা। একাধিক প্রশ্ন বা বিকল্প রাখলে প্রক্রিয়ার বৈধতা দুর্বল হবে।’
