বিশ্ব স্ট্রোক দিবস: সচেতনতা, প্রতিরোধ ও দ্রুত চিকিৎসার আহ্বান
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:১১, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো স্ট্রোকের ঝুঁকি, লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিশ্ব স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (WSO) যৌথভাবে এ দিবস পালন করে থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘প্রতিটি মিনিটই গুরুত্বপূর্ণ’। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ সময় নষ্ট মানেই মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং জীবনের ঝুঁকি।
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কোনো কারণে ব্যাহত হলে স্ট্রোক ঘটে। সাধারণত রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে বা রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ ঘটলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। রক্তের মাধ্যমেই মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পায়। তাই রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো মারা যায়। এর ফলেই মানুষ হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। স্ট্রোকের প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বর্তমানে এটি বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, পৃথিবীতে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আর প্রতিবছর প্রায় ছয় কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে। স্ট্রোকে আক্রান্ত প্রায় দেড় কোটি মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হন এবং তাদের জীবনের গতি থেমে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেন এবং প্রায় ৩০ শতাংশ স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান। অনেকেই বেঁচে থেকেও দুর্বিষহ জীবনযাপন করেন।
বিশ্বব্যাপী স্ট্রোকে আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশেও স্ট্রোক এখন বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সর্বশেষ ‘গ্লোবাল হেলথ এস্টিমেটস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ২০১৯ সালেই দেশে স্ট্রোকজনিত কারণে মারা গেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৬৬ জন মানুষ। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এই মারাত্মক রোগে। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৫ জন।
জীবনযাত্রায় অনিয়ম, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এই রোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং ধূমপান-মাদক পরিহার করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ সনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ব স্ট্রোক অর্গানাইজেশন ‘Act FAST’ নামের একটি সহজ সূত্র দিয়েছে, যা দিয়ে স্ট্রোক সনাক্ত এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। FAST-এর পূর্ণরূপ হলো-
F: Face drooping, অর্থাৎ মুখের এক পাশ বেঁকে যাওয়া।
A: Arm weakness, অর্থাৎ বাহু দুর্বল হয়ে যাওয়া।
S: Speech difficulty, অর্থাৎ কথা জড়িয়ে যাওয়া বা অস্পষ্ট হওয়া।
T: Time to call emergency, অর্থাৎ সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া।
