গাজায় যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে হামলার নির্দেশ নেতানিয়াহুর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:৩৫, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:০৮, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার তাৎক্ষণিক ও শক্তিশালী হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। তার দপ্তরের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগে নিরাপত্তা বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত দেন। ওই বৈঠকের পরপরই ইসরায়েলি বিমানবাহিনী একাধিক স্থানে তীব্র হামলা চালায়। এতে অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং কয়েকজন আহত হন।
ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ক্যানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেতানিয়াহু শুধু হামলার নির্দেশই দেননি, বরং গাজায় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার বিস্তৃতিও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই নতুন নিয়ন্ত্রণরেখাকে ‘হলুদ রেখা’ বলা হচ্ছে, যা উত্তর গাজার দক্ষিণাংশ থেকে রাফাহ শহরের প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সীমার ভেতরে ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী অবস্থান করছে।
ক্যান জানিয়েছে, নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তের আগে মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করেন। তবে তার দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের দাবি, রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সেনারা স্নাইপার গুলি ও অ্যান্টি-ট্যাংক হামলার শিকার হওয়ার পরই এই অভিযান শুরু হয়। তবে হামাস ওই হামলার দায় অস্বীকার করেছে। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল নিজেই।
তারা আরও জানায়, ইসরায়েলের নতুন হামলার কারণে বন্দি ইসরায়েলিদের মৃতদেহ হস্তান্তরের পরিকল্পনাও স্থগিত করা হয়েছে।
হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল যদি উত্তেজনা বাড়ায়, তবে তা দেহ উদ্ধারের কাজ ও মানবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে এবং দখলদারদের মৃতদেহ ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করবে।
এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা নেতানিয়াহুর দপ্তরকে জানিয়েছেন, হামাসের কোনো পদক্ষেপই এখনো যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর্যায়ে পড়ছে না। তারা ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয় যা পুরো যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ভেঙে দিতে পারে।
তবে এই সতর্কতার পরও নেতানিয়াহু জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডাকেন এবং নতুন করে গাজায় বিমান হামলার নির্দেশ দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ, সেনাপ্রধান এয়াল জামির এবং গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের পরিচালক ডেভিড জিনি।
গত ১০ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অধীনে। এর প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটিতে গাজা পুনর্গঠন এবং হামাসবিহীন নতুন প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত।
গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৫০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
