সনদবহির্ভূত অনেক সুপারিশ খসড়ায়: সালাহউদ্দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৩১, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
দেশের যে সব রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশে তাদের স্বাক্ষরিত সনদবহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ যুক্ত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির এই নেতা বলেছেন, এই সুপারিশের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
এর আগে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এই সুপারিশ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘৮৪টি দফার জুলাই জাতীয় সনদেন বিভিন্ন দফায় আমাদের এবং বিভিন্ন দলের কিছু ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট আছে। প্রিন্টেড জাতীয় জুলাই সনদের বইয়েও এসব নোট অব ডিসেন্ট আছে। অথচ বিস্ময়করভাবে আজকে যে সংযুক্তিগুলো দেওয়া হলো সুপারিশমালার সাথে, সেখানে এই নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখ নাই।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদের নামে একটা আইডিয়া এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেটা আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কখনো টেবিলে ছিল না, আলোচিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।’
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যগণ নির্বাচিত হবেন। এখন সেই সংসদ সদস্যদের যদি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, সেটা তো জাতীয় সংসদেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন জাতীয় সংসদে কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তো আলোচিত হয়নি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে। এ বিষয়ের কোনো সুপারিশ বা এ বিষয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ার পরও এই সুপারিশমালার মধ্যে হঠাৎ করে যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ একই সাথে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে, উনারা এই সিদ্ধান্তটা আরোপ করতে পারেন না। চাপিয়ে দিতে পারেন না।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার কথা। সংবিধান সংস্কার পরিষদের জন্য তো কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন তো হবে জাতীয় সংসদের জন্য।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘যে সমস্ত প্রশ্নগুলো আমি দেখলাম এখানে বলা হয়েছে আপার হাউসে অর্থাৎ উচ্চকক্ষে নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসনের মধ্য দিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। এই রকম তো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে ১০০ সদস্যের এবং তারা কীভাবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে সেটার ব্যাপারে তো ঐকমত্য হয়নি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সংসদের উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো। আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচন নিম্নকক্ষে সদস্যের অনুপাতে অর্থাৎ সংসদ নির্বাচনে কোন দলগুলো কতগুলো আসন পেল, তার ভিত্তিতে বণ্টনের কথা বলা হয়। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গ তুলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেউ ভোটের অনুপাতে চেয়েছে, আমরা চেয়েছি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে। এখানে বলা আছে যেভাবে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া হয়েছে সেই নোট অব ডিসেন্টগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি আমরা ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হই বা কোনো দল হয়, ওই সময় ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়ে তারা সেইভাবে সেটা বাস্তবায়ন করবে। তারপরে এখানে পিআরের ভিত্তিতে তারা প্রস্তাব সরাসরি করে ফেললেন এবং এখানে কোনো নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ নাই।’
উচ্চকক্ষের এখতিয়ার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘বলা আছে যে অর্থবিল এবং আস্থা বিল বাদে, আস্থা ভোট বাদে সব বিষয় উচ্চকক্ষে উত্থাপন করা হবে। এইখানেও কর্মপরিধি কার্যপরিধি–সংক্রান্ত নোট অব ডিসেন্ট আছে যে উচ্চকক্ষ যেহেতু নির্বাচিত নয় সরাসরি সে ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনীসহ অন্যান্য বিষয় তাঁরা বিবেচনা করতে পারেন না। জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কারও নেই। এই বিষয়গুলো আলোচিত হওয়ার পরেও নোট অব ডিসেন্ট থাকার পরেও তাঁরা সরাসরি এই আদেশের সংযুক্তিতে রেখেছেন। এগুলো কোনোভাবে বিবেচনা করা যায় না।’
