মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
আন্তর্জাতিক আদালতে গেল আওয়ামী লীগ
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০০:৩৬, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩৮, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর “হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের” অভিযোগ তুলে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) আবেদন করা হয়েছে।
লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের ব্রিটিশ আইনজীবী স্টিভেন পাওলস আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ দাখিল করেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মীর ওপর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা চালানো হয়েছে।
রোম সংবিধির ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালতের প্রসিকিউটরের কাছে এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ রোম সংবিধিতে অনুসমর্থন করে এবং ওই বছরের ১ জুন থেকে তা কার্যকর হয়।
পাওলসের আবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অনেককে জনতা তৈরি করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া শত শত নেতাকর্মীকে অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার, জামিন ছাড়াই আটক ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
এসব ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ও সাক্ষ্য যুক্ত করে নথিতে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
আবেদনে বলা হয়েছে, “এসব ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং বাংলাদেশে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হওয়ার কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, রাজনীতিক থেকে সাংবাদিক, বিচারক, আইনজীবী, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী—বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কারাগারে অন্তত ২৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে, যাদের অনেকের শরীরে “নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন” পাওয়া গেছে, যদিও সরকারিভাবে সেসব মৃত্যুকে “হৃদরোগ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্টিভেন পাওলস বলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ নামে এক অভিযান চালায়, যার লক্ষ্য ছিল “আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দমন।”পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে মাত্র ১২ দিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর সরকার একটি ‘ইমিউনিটি অর্ডার’ জারি করে, যাতে বলা হয়েছিল— “১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তার করা হবে না।”
আবেদনে বলা হয়, এই দায়মুক্তি “রাষ্ট্রের নীরব সমর্থনের ইঙ্গিত” দেয় এবং অপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে।
এমন এক সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আইসিসিতে অভিযোগ করা হল, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট সময়ে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে। ওই বছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন।
