ডাম্বফোনের উত্থান : স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তির নতুন সমাধান?
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:০৮, ১ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কাজ, বিনোদন, যোগাযোগ—সবকিছুই এখন এর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু একইসঙ্গে এটি ঘুম, মানসিক কর্মক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে একাধিক গবেষণা জানাচ্ছে। অনেকেই তাই ডিজিটাল ডিটক্স বা বিকল্প পথ খুঁজছেন। এর মধ্যেই নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে তথাকথিত “ডাম্বফোন” বা সীমিত ফিচারের মোবাইল।
বাজারে ডাম্বফোনের অবস্থান
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী বিক্রি হওয়া ফোনের প্রায় ১৫% ছিল ফিচার ফোন—সংখ্যায় প্রায় ২১ কোটি। তবে উন্নত দেশগুলোতে এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবুও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় তরুণদের একাংশ আবারও “ফ্লিপ ফোন” বা “ব্রিক ফোন”-এর দিকে ঝুঁকছে, যা সামাজিক মাধ্যমে #BringBackFlipPhones ট্রেন্ডের মাধ্যমে স্পষ্ট।
কোম্পানিগুলোর উদ্যোগ
সুইস কোম্পানি পাঙ্কট (Punkt): ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান “ডিজিটাল মিনিমালিজম”-এর ধারণা ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের নতুন মডেল MP02 শুধু কল ও মেসেজ নয়, সিকিউরিটি ও প্রাইভেসিকেও গুরুত্ব দেয়।
দ্য লাইট ফোন (Light Phone): ২০১৪ সালে গুগলের ক্রিয়েটিভ ল্যাব থেকে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটি ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন ও অসীম স্ক্রলিং থেকে মুক্ত রাখতে ফোন তৈরি করছে। সর্বশেষ Light Phone III-এ 5G, এনএফসি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সুবিধা যুক্ত হয়েছে।
এইচএমডি গ্লোবাল (HMD): নকিয়া ব্র্যান্ডের পুনর্জাগরণ ঘটানো এই প্রতিষ্ঠান ফিচার ফোনের পাশাপাশি শিশুদের জন্য HMD Fuse নামের নিয়ন্ত্রিত স্মার্টফোন চালু করেছে, যেখানে অভিভাবকরা ধাপে ধাপে ফিচার আনলক করতে পারেন।
দামি হলেও জনপ্রিয়
ডাম্বফোন মানেই সস্তা—এমন নয়। পাঙ্কটের MP02-এর দাম প্রায় ২৯৯ ডলার, আর লাইট ফোন III বিক্রি হচ্ছে ৬৯৯ ডলারে। তবুও ব্যবহারকারীরা বলছেন, "মনের শান্তি ও মনোযোগ ফেরাতে এই বিনিয়োগ মূল্যবান।"
সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত
বড় কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক মডেল যেখানে “অ্যাটেনশন ইকোনমি” ঘিরে আবর্তিত, সেখানে ডাম্বফোন আসলে এক ধরনের প্রতিরোধের প্রতীক। বিশেষ করে অভিভাবকরা সন্তানদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ামুক্ত বিকল্প হিসেবে এগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
ডাম্বফোন শুধু প্রযুক্তির রেট্রো ফেরা নয়; বরং এটি এক নতুন জীবনধারার ঘোষণা। যেখানে মনোযোগ, সময় আর মানসিক শান্তি—সবই আবার ফিরে পেতে চায় মানুষ। প্রশ্ন এখন, এই প্রবণতা কি কেবল সীমিত এক শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি আসন্ন বছরগুলোতে স্মার্টফোনের বিকল্প বাস্তব সমাধান হয়ে উঠবে?